‘গুলি কর’ চিৎকারে মণিপুরী মহিলাদের ঘেরাটোপে সশস্ত্র বাহিনী, মোদীর ভূমিকায় ক্ষোভ

ছাউনির ভিতরে অসম রাইফেলস জওয়ানরা। আর বাইরে বিক্ষোভকারী মণিপুরী মহিলারা। তাদের অবস্থান থেকে স্লোগান চলছে ‘বুকে গুলি কর’। বিজেপি শাসিত মণিপুরের রক্তাক্ত জাতি সংঘর্ষ (Manipur…

ছাউনির ভিতরে অসম রাইফেলস জওয়ানরা। আর বাইরে বিক্ষোভকারী মণিপুরী মহিলারা। তাদের অবস্থান থেকে স্লোগান চলছে ‘বুকে গুলি কর’। বিজেপি শাসিত মণিপুরের রক্তাক্ত জাতি সংঘর্ষ (Manipur Violence) থামাতে অসম রাইফেলসের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। শত শত মণিপুরী মহিলা ঘিরে রেখেছেন আধাসেনা জওয়ানদের।

গণবিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর। মহিলারা কাংপোকপি জেলার সমস্ত অসম রাইফেলস ক্যাম্প সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাংপোকপি টাউনের শত শত কুকি-জো মহিলা বু়ধবার (11 সেপ্টেম্বর) অসম রাইফেলস পোস্টের সামনে বিক্ষোভ করেন।

   

Manipur

কুকি গোষ্ঠীর অভিযোগ, রাজ্যের বিজেপি সরকার মেইতেইদের হয়ে কাজ করছে।অসম রাইফেলসকে কুকিদের বিরুদ্ধে নামানো হয়েছে। মণিপুর পুলিশের দাবি, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে কুকি সশস্ত্র গোষ্ঠী যুদ্ধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে।

উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পুলিশের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকে অসম রাইফেলস। এই আধাসেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে  নাগাল্যান্ড, মণিপুরে ক্ষোভ সর্বাধিক। অভিযোগ, সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন-আফস্পা (AFSPA) জারি রেখে নিরাপত্তার নামে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়। কেন্দ্রের অবস্থান, বিচ্ছিন্নতাবাদী-জঙ্গি উপদ্রুত এলাকায় নিরাপত্তায় আফস্পা জারি রাখা হয়।

আফস্পা আইনের বিরুদ্ধে 2004 সালে মণিপুরের মহিলাদের নগ্ন প্রতিবাদে বিশ্ব শিহরিত হয়েছিল। ইম্ফলের অসম রাইফেলস দফতরের সম্মুখে হয়েছিল সেই প্রতিবাদ। এবার কাংকোপি জেলায় মণিপুরী মহিলাদের ঘেরাটোপে বন্দি অসম রাইফেলস।

মণিপুরের পার্বত্য এলাকায় কুকি ও উপত্যকা-সমতলে মেইতেইরা শক্তিশালী। দুই জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠনের একাধিক ভিডিও ছড়িয়েছে। দুই তরফ পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে জাতি সংঘর্ষে রক্তাক্ত মণিপুরে শত-শত নিহত। মাঝে কিছু সময় শান্ত ছিল পরিস্থিতি। গত 1 সেপ্টেম্বর থেকে ফের রক্তাক্ত সংঘর্ষে একাধিক নিহত।

Manipur

মণিপুরের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও খারাপ বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। মায়ানমার সংলগ্ন রাজ্যটির দুই প্রধান জনগোষ্ঠী কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে সংঘর্ষের রেশ ধরে তীব্র জনরোষের মুখে বিজেপি সরকার। চলছে ১৪৪ ধারা। বন্ধ ইন্টারনেট।

রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তুঙ্গে। রাজধানী ইম্ফলে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে গত সোমবার থেকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ছবি ছিঁড়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তাদের রাজভবন অভিযান থামাতে পুলিশ-আধাসেনা যথেচ্ছ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ।

প্রদেশ বিজেপির অভ্যন্তরেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তুঙ্গে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিদেশে ঘুরে রক্তাক্ত মণিপুরে যাওয়ার সময় নেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর।

PTI জানাচ্ছে, জাতিগত বিবাদ-বিধ্বস্ত মণিপুরে নিরাপত্তার দায়িত্বে প্রায় 2,000 জন কর্মী নিয়ে গঠিত দুটি নতুন সিআরপিএফ ব্যাটালিয়ন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। 58 নম্বর ব্যাটালিয়ন তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গল থেকে এবং 112 নম্বর ব্যাটালিয়ন ঝাড়খণ্ডের লাতেহার থেকে সরিয়ে মণিপুরে পাঠানো হচ্ছে। প্রথম ইউনিট মণিপুরের কাংভাই (চূড়াচাঁদপুর) থাকবে এবং দ্বিতীয়টি ইম্ফলের চারপাশে থাকবে।