রাজস্থানের ঝালাওয়ার জেলার (Safety Audit) পিপলোদি সরকারি স্কুলে ছাদ ধসে সাত শিশুর মৃত্যু এবং ২৭ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে দেশ। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশের স্কুল এবং শিশুদের জন্য ব্যবহৃত সরকারি সুবিধাগুলিতে নিরাপত্তা নিরীক্ষণ বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ জারি করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধ করা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা।
গত ২৫ জুলাই, ঝালাওয়ারের পিপলোদি সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চলাকালীন ছাদ ধসে পড়ে। এই ঘটনায় প্রায় ৩৫ জন শিশু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে। স্থানীয় শিক্ষক, গ্রামবাসী এবং জরুরি পরিষেবা দলগুলি তৎক্ষণাৎ উদ্ধারকার্য শুরু করে। তবে, সাত শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি, এবং আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
পুলিশ জানিয়েছে, ভারী বর্ষণ এবং পুরনো ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তারা বারবার প্রশাসনকে ভবনের দুর্বল অবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রধান সচিবদের কাছে একটি জরুরি পরিপত্র জারি করেছে। এতে ২০২১ সালের ‘গাইডলাইনস অন স্কুল সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি’ এবং জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) ২০১৬ সালের নির্দেশিকার উল্লেখ করে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথম পদক্ষেপ হল, সকল স্কুল এবং শিশুদের জন্য ব্যবহৃত সরকারি সুবিধাগুলিতে নিরাপত্তা নিরীক্ষণ বাধ্যতামূলক করা। এই নিরীক্ষণে ভবনের কাঠামোগত স্থিতিশীলতা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি প্রস্থান এবং বৈদ্যুতিক তারের অবস্থা পরীক্ষা করা হবে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং জরুরি প্রস্তুতির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প বা অন্যান্য দুর্যোগের সময় স্কুল থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার মহড়া, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল।
তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে, শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলিতে কাউন্সেলিং পরিষেবা, পিয়ার সাপোর্ট নেটওয়ার্ক এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থ পদক্ষেপ হল একটি কঠোর রিপোর্টিং ব্যবস্থা প্রবর্তন। যেকোনও সম্ভাব্য বিপজ্জনক ঘটনা বা ‘নিয়ার-মিস’ ঘটনা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। বিলম্ব বা অবহেলার ক্ষেত্রে কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
পঞ্চম পদক্ষেপে অভিভাবক, অভিভাবক সমিতি এবং সম্প্রদায়ের নেতাদের স্কুলের অবকাঠামো, পরিবহন বা অন্যান্য শিশু-সংশ্লিষ্ট স্থানে অনিরাপদ পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে এবং রিপোর্ট করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পাঁচজন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, এবং ঝালাওয়ারের জেলা প্রশাসক অজয় সিং রাঠোর জানিয়েছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা প্রশাসনের অবহেলার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাসুন্ধরা রাজে শিক্ষা বিভাগের ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করে রাজ্যব্যাপী নিরাপত্তা নিরীক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের (এনআইডিএম) তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মাত্র ৪০% স্কুলে নিরাপত্তা নিরীক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে, যা এই ধরনের ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী পাইলট
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশিকা স্কুলগুলিকে নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নির্দেশনার সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতার উপর। জোকা মেডিকেল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি, এই নিরাপত্তা উদ্যোগগুলি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারে।