সবজি চুরির সন্দেহে ‘রামরাজ্যে’ যুবককে পিটিয়ে হত্যা

ত্রিপুরার ধলাই জেলার চিত্রেসেন করবাড়ি পাড়া এলাকায় সবজি চুরির সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা (Man Lynched) করা হয়েছে। এই ঘটনাটি মঙ্গলবার ও বুধবারের মধ্যবর্তী রাতে…

Man Lynched in Tripura Over Vegetable Theft Suspicion in Dhalai

ত্রিপুরার ধলাই জেলার চিত্রেসেন করবাড়ি পাড়া এলাকায় সবজি চুরির সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা (Man Lynched) করা হয়েছে। এই ঘটনাটি মঙ্গলবার ও বুধবারের মধ্যবর্তী রাতে মানু নদীর তীরে ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিছু কৃষক ওই যুবককে তাদের পাট্টায় নেওয়া একটি চাষের জমি থেকে সবজি চুরি করতে দেখেন। এরপর ক্ষুব্ধ কৃষকদের একটি দল তাকে মারাত্মকভাবে মারধর করে, যার ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

বুধবার সকালে স্থানীয়রা ওই যুবকের মৃতদেহ দেখতে পায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে মানু থানায় খবর দেয়। জমির মালিক জানিয়েছেন, তিনি সকাল সাড়ে সাতটার দিকে একটি ফোন কল পান এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাকে জানানো হয় যে, যুবকটি সবজি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে এবং কৃষকদের দ্বারা পিটিয়ে মারা হয়েছে। এই ঘটনায় মানু থানায় একটি প্রথম তথ্য রিপোর্ট (এফআইআর) দায়ের করা হয়েছে এবং মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

   

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তদন্ত চলছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ঘটনা ত্রিপুরায় মব লিঞ্চিং-এর ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে আরেকটি মর্মান্তিক সংযোজন। এর আগে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ ত্রিপুরার বেলোনিয়ায় চুরির সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়া, ২০২১ সালে খোয়াই জেলায় গবাদি পশু চুরির সন্দেহে তিনজন এবং ধলাই জেলার লালছড়ি গ্রামে একজন লরি চালককে একইভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

Advertisements

এই ঘটনা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। অনেকে এই ধরনের নৃশংসতার নিন্দা করেছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কৃষকদের জন্য ফসল চুরি একটি বড় সমস্যা, তবে এটি কোনোভাবেই এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ন্যায়সঙ্গত করতে পারে না। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত ত্বরান্বিত করেছে এবং জনসাধারণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনা ত্রিপুরায় আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মব লিঞ্চিং-এর ঘটনা রোধ করতে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই ঘটনার পর ধলাই জেলায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ধলাই জেলার এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের সমাজে সহিষ্ণুতা এবং আইনের শাসনের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। সবজি চুরির মতো ছোটখাটো অপরাধের জন্য কাউকে এভাবে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনার তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করা যায়। স্থানীয় সম্প্রদায় এবং প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ত্রিপুরায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।