Talaq over phon: ফোনে তালাক দেওয়ার অভিযোগে স্বামী আটক

কেরলের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা মালাপ্পুরমে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে ফোনে তালাক দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত শাহুল হামিদের বিরুদ্ধে শুধু…

A man in Kerala faces charges for pronouncing talaq over the phone

কেরলের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা মালাপ্পুরমে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে ফোনে তালাক দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত শাহুল হামিদের বিরুদ্ধে শুধু তালাকের অভিযোগই নয়, তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং যৌতুক দাবির অভিযোগও উঠেছে। শাহুল হামিদ মালাপ্পুরমের এডাক্কুলামের বাসিন্দা। কালপাকাঞ্চেরি থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগকারিণী হলেন এক ২১ বছর বয়সী তরুণী, যিনি জেলার নাদুভাট্টমের বাসিন্দা। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন এবং বারবার যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং শাহুলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাহুল হামিদ সম্প্রতি তার স্ত্রীকে ফোনে তিনবার ‘তালাক’ শব্দ উচ্চারণ করে বিবাহবিচ্ছেদ ঘোষণা করেছেন। এটি ভারতীয় আইনে ‘তিন তালাক’ হিসেবে পরিচিত, যা ২০১৯ সালে মুসলিম নারী (বিবাহে অধিকার সংরক্ষণ) আইনের অধীনে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে তাকে আরও যৌতুক আনার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এই দাবি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে শারীরিকভাবে মারধর করা হতো। শেষ পর্যন্ত ফোনে তালাক দেওয়ার ঘটনাটি তার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, এবং তিনি পুলিশের শরণাপন্ন হন।

পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তিন তালাক, শারীরিক নির্যাতন এবং যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছি। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি এবং অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হবে।” মহিলার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শাহুল হামিদের বিরুদ্ধে মুসলিম নারী (বিবাহে অধিকার সংরক্ষণ) আইন, ২০১৯-এর অধীনে তিন তালাক দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই আইনে তিন তালাক দেওয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং এর জন্য তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়াও, ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৪৯৮এ ধারা (স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা) এবং যৌতুক নিষেধ আইনের অধীনে অভিযোগ যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তকে শীঘ্রই আদালতে হাজির করা হবে।

মহিলার পরিবার এই ঘটনায় গভীর শোকে মুহ্যমান। তার বাবা বলেন, “আমরা মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম তার ভালো ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু সে এত নির্যাতনের শিকার হবে, তা ভাবিনি। আমরা চাই অপরাধী শাস্তি পাক।” স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শাহুলের পরিবারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো ছিল না, এবং এই ঘটনা তাদের কাছে চরম বিস্ময়কর। একজন প্রতিবেশী বলেন, “এমন কাণ্ড কেউ আশা করেনি। আমরা মেয়েটির জন্য ন্যায়বিচার চাই।”

Advertisements

এই ঘটনা স্থানীয় সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নারী অধিকার কর্মীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং তিন তালাক আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন। একজন কর্মী বলেন, “এই ধরনের ঘটনা নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং অবিচারের প্রমাণ। আমরা আশা করি, আইন তার পথে চলবে।”

ভারতে ২০১৯ সালে তিন তালাক নিষিদ্ধ হলেও, এই প্রথা এখনও কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭ সালে এটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিল, এবং পরবর্তীতে সংসদে আইন পাস হয়। তবে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আইনের প্রয়োগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এখনও অনেক পথ বাকি।

কালপাকাঞ্চেরি পুলিশ এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছে। মহিলার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে এবং প্রতিবেশীদের থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, যৌতুক দাবির বিষয়ে অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। মহিলাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তার নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মালাপ্পুরমের এই ঘটনা নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং তিন তালাকের অবৈধ প্রয়োগের একটি মর্মান্তিক উদাহরণ। শাহুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়ায় আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই ঘটনা সমাজে নারী অধিকার এবং পারিবারিক সুস্থতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তদন্তের ফলাফল এবং আদালতের রায় এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।