‘বিজেপি ছুপা রুস্তম’, বহরমপুরে বিস্ফোরক মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) আজ মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছেন। তিনি বলেছেন ওড়িশায় বাংলার…

mamata in mursidabad

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) আজ মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছেন। তিনি বলেছেন ওড়িশায় বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার চলছে এবং এর পিছনে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনকে একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন যে এই মন্দিরের উদ্বোধন ওড়িশার কিছু মহলের “গায়ে লেগেছে”, যার জেরে বাঙালি শ্রমিকদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে এ ও বলেন যে “বিজেপি ধর্মের রাজনীতি করছে। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।” মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন “কেন ৪৮ ঘন্টা এল নিভিয়ে রাখা হয়েছিল। এই হিংসা সম্পূর্ণ ভাবে পরিকল্পিত এবং বিজেপির নাম করে তিনি বলেন এরা ‘ছুপা রুস্তম।’ এ বিষয়ে তিনি আরো যোগ করেন “যারা ধর্মীয় হিংসায় মদত দেয় তারা অপরাধী ছাড়া কিছু নয়।”

   

হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে কোহলির ‘বিরাট’ রেকর্ড ভাঙতে পারেন রাহুল

সংবাদ সম্মেলনের বিস্তারিত (mamata)

বহরমপুরে এই সংবাদ সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) বলেন, “আমাদের বাংলার শ্রমিকরা ওড়িশায় কাজের জন্য গিয়েছেন। তারা কারও ক্ষতি করেনি, তবু তাদের উপর নির্মম অত্যাচার চলছে। তাদের মারধর করা হচ্ছে, জোর করে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এর পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন ওড়িশার কিছু গোষ্ঠীর গায়ে লেগেছে। তারা মনে করছে, এটা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর আঘাত। এই ক্ষোভ তারা আমাদের নিরীহ শ্রমিকদের উপর ঝাড়ছে।” তিনি ওড়িশা সরকারের কাছে এই ঘটনার তদন্ত এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

মুখ্যমন্ত্রী (mamata) আরও বলেন, “জগন্নাথ দেব সকলের। তাঁর প্রতি ভক্তি বাংলার মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে রয়েছে। দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ আমাদের সাংস্কৃতিক উদ্যোগ। এটিকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া বা এর জন্য আমাদের শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করা অগ্রহণযোগ্য। আমরা এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকেও এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনা

গত কয়েক সপ্তাহে ওড়িশায় বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা এলাকা থেকে ওড়িশায় কাজের জন্য যাওয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন যে তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং ধর্মীয় স্লোগান উচ্চারণে বাধ্য করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ওড়িশায় বাঙালি শ্রমিকদের মারধর করে ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করা হচ্ছে।” এই ঘটনাগুলি বাংলার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, এবং অনেকে ওড়িশা ছেড়ে ফিরে আসছেন। এমনকি দ্বৈতাপতি যিনি জগন্নাথের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকেও জবাবদিহি করতে হচ্ছে।

জগন্নাথ মন্দির বিতর্ক

দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন গত ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সম্পন্ন হয়েছে। এই মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে, এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) নিজে এর জন্য একটি গান লিখে ও সুর দিয়েছেন। এবিপি আনন্দের খবর অনুযায়ী, মন্দিরের উপর জোড়া রামধনুর ছবি পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী এটিকে “ঐশ্বরিক আশীর্বাদ” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “মন্দিরের শীর্ষে ভগবান বিষ্ণুর অষ্টধাতুর নীল চক্র স্থাপন করা হয়েছে।”

তবে, এই মন্দিরের উদ্বোধন ওড়িশার কিছু মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ ওড়িশার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর “আঘাত” হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে ওড়িশার কিছু গোষ্ঠী বাঙালি শ্রমিকদের উপর হামলা চালাচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata) এই মন্তব্যের পর ওড়িশার শাসক দল বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং বিরোধী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেডির একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা শ্রমিকদের উপর কোনও অত্যাচার সমর্থন করি না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তবে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়ানো অযৌক্তিক।”

তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওড়িশা সরকারের সমালোচনা তীব্র করেছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “ওড়িশায় বাঙালি শ্রমিকদের উপর অত্যাচার একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বিজেপি এবং বিজেডি এই ঘটনায় একে অপরকে রক্ষা করছে।” তৃণমূল কর্মীরা বহরমপুরে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছে, যেখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবি উঠেছে।

বহরমপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata) সংবাদ সম্মেলন ওড়িশায় বাঙালি শ্রমিকদের উপর অত্যাচার এবং দিঘায় জগন্নাথ মন্দির বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তার সঙ্গে মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসার তদন্ত হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের শাস্তির কোথায উল্লেখ করেন। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে তীব্র করেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে কি প্রভাব ফেলে তা সময় বলবে।