নিউজ ডেস্ক: এক্সিট পোল নিয়ে এবার জাতীয়স্তরে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে তৃণমূল। তার জন্য চলতি সপ্তাহেই এক্সিট পোল কেলেঙ্কারী নিয়ে শেয়ার বাজার নিমায়ক সংস্থা সেবি অভিযান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের দল। আগামী মঙ্গলবার ১৮ জুন ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিকী দল উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ও শরদ পাওয়ারের এনসিপিকে সঙ্গে নিয়ে সেবি যাত্রার পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলে থাকবেন রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ, সাকেত গোখলে প্রমূখ। এই বিষয়ে শরদ পাওয়ার ও উদ্ধব গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে বলেই দাবি দলের।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেবি চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচার কাছে গোটা বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে জানা গিয়েছে। লোকসভায় ২৯ টি আসনে বিপুল জয় পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই ফের জাতীয়স্তরে এবার ‘রাজনৈতিক আকাঙ্খা’ মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তৃণমূল। তবে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সেটা আদৌ কতটা সম্ভব তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান রাজনৈতিকমহল। মোদীর শপথের আগে অখিলেশ ও মুম্বইতে গিয়ে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠকের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন অভিষেক। তখন থেকেই কংগ্রেসকে ‘বাইপাস’ করার জল্পনা শুরু হয়। এবার তৃণমূলের সেবি অভিযান সেই সম্ভাবনাকে কিছুটা বাড়িয়ে দিল বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
লোকসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে গত ১ জুন বুথ ফেরত সমীক্ষার নিরিখে এক্সিট পোল সম্প্রচার করেছিল দেশের তাবড় ন্যাশনাল মিডিয়া। সেখানে বেশিরভাগ চ্যানেলই মোদী সরকারের আসন সংখ্যা ৪০০-এর অধিকই দেখিয়েছিল। কিন্তু ৪ জুন আসল ফলাফল বেরোয় তা পুরো ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে অবস্থান করে। ৪০০ তো দূর, মাত্র ২৪০ আসনেই থেমে যায় বিজেপির রথের চাকা। আর তারপরই ন্যাশনাল মিডিয়ার দেখানো এক্সটিপোল নিয়ে সরব হয় বিরোধী দলগুলি।
প্রশ্ন উঠতে থাকে এই এক্সিট পোলের বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই ভুয়ো এক্সিট পোল দেখিয়ে মোদী সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, এই পরিকল্পিত সমীক্ষা দেখিয়ে ভোট গণনার আগেই বিরোধীদের মানসিকভাবে ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীর সরকার। পাশাপাশি শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের আস্থা জিততেও এই সমীক্ষা সম্প্রচার করা হয়। বিনিয়োগকারীদের কাছেও একটি বার্তা পৌঁছনো হয় যেন মোদী সরকারই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরছে ক্ষমতায়। যাতে বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় বিনিয়োগ করেন। কিন্তু আদতে ভোটের ফলাফল বিজেপির ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় ৪ঠা জুন সকাল থেকেই পতন শুরু হয়েছিল দালাল স্ট্রিটের।
যার জেরে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে দালাল স্ট্রিট সূত্রে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় বহু বিনিয়োগকারীর ব্যপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। ইতিমধ্যেই যৌথ সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে কংগ্রেস। এই ঘটনা সামনে আসতেই আগেই সেবিকে চিঠি পাঠিয়েছিল তৃণমূল। এবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অবস্থান আরও জোরদার করতে এনসিপি ও উদ্ধবের শিবসেনাকে নিয়ে কোমর বাঁধার প্রস্তুতি নিয়েছে তৃণমূল।
আগামী জুলাই থেকে নয়া সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। সেখানেই পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবে এনডিএ সরকার। মনে করা হচ্ছে আসন্ন সংসদীয় অধিবেশনেই শেয়ার বাজার দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে চেপে ধরার তোড়জোড় ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে বিরোধী ইন্ডিয়া শিবির। তবে কংগ্রেসের যৌথ সংসদীয় কমিটি বা ‘জেপিসি’র আহ্বানে কোন কোন বিরোধী দল সাড়া দেয় সেটাই দেখার। মূলত এক্সিট পোলের স্টক মার্কেট দুর্নীতি নিয়ে যথেষ্ট চাপে রয়েছে এনডিএ জোট সরকার। অন্যদিকে, আগের তুলনায় সংসদেও যথেষ্ট শক্তিশালী বিরোধীদলগুলিও। সুতরাং শেয়ার বাজারের ‘ভূত’কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপলে তা যথেষ্টই অস্বস্তির হবে মোদী সরকারের পক্ষে, এমনটাই মত রাজনৈতিকমহলের।