চাকরিহারা অশিক্ষক কর্মীদের ভাতা ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, কত টাকা করে পাবেন?

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগ প্যানেল বাতিল হওয়ায় প্রায় ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গেছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী…

mamata banerjee anounces for group c

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগ প্যানেল বাতিল হওয়ায় প্রায় ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গেছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata banerjee) চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের জন্য ‘সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিম’-এর মাধ্যমে এক্সগ্রাসিয়া প্রদানের ঘোষণা করেছেন।

   

গ্রুপ সি কর্মীদের জন্য ২৫,০০০ টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য ২০,০০০ টাকা প্রতি মাসে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকার মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে রিভিউ পিটিশন দায়েরের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এই ঘোষণা চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে সাময়িক স্বস্তি এনে দিলেও, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য আইনি লড়াইয়ের উপর নির্ভর করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের রায় ও প্যানেল বাতিল

২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের SSC নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে। এই রায়ে ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়।

হাইকোর্ট জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, যার মধ্যে সাদা ওএমআর শিট জমা দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল থেকে নিয়োগ এবং অতিরিক্ত শূন্যপদে নিয়োগের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার, SSC এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে।

২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। আদালত জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক কারচুপি হয়েছে, যা সংশোধনের কোনো সুযোগ রাখেনি। ফলে পুরো প্যানেল বাতিল করা হয়। তবে, ক্যানসার আক্রান্ত প্রার্থী সোমা দাসের চাকরি বহাল রাখা হয়। আদালত আরও নির্দেশ দেয়, অযোগ্য প্রার্থীদের ১২ শতাংশ সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে এবং তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

মমতার ঘোষণা: সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিম (mamata banerjee)

চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata banerjee) সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিমের আওতায় এক্সগ্রাসিয়া প্রদানের ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “যতক্ষণ না আইনি সমাধান হচ্ছে, ততক্ষণ গ্রুপ সি কর্মীদের ২৫,০০০ টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ২০,০০০ টাকা প্রতি মাসে দেওয়া হবে।

এই টাকা সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিমের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। আমরা আদালতের রায় মেনে কাজ করব এবং কোনো ভাগাভাগি করছি না।” এই ঘোষণা চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের জন্য সাময়িক আর্থিক স্বস্তি আনলেও, অনেকে এটিকে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন না।

মমতা (mamata banerjee) আরও জানান, এপ্রিল মাস থেকে শিক্ষাকর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “আমি শিক্ষা দপ্তরকে এই বিষয়ে জড়াচ্ছি না। তবে, আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে রিভিউ পিটিশন দায়ের করছি।” তিনি শিক্ষাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা আইনি ব্যবস্থা তৈরি করছি। তাড়াহুড়ো করে ভুল করতে চাই না। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে রিভিউ পিটিশন দায়ের করা হবে।”

রিভিউ পিটিশনের প্রস্তুতি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata banerjee) জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে রিভিউ পিটিশন দায়ের করতে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করছে। তিনি বলেন, “শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সবার জন্য রিভিউ পিটিশন করা হবে। আমরা রায়ের ব্যাখ্যাও চাইব।” এই পিটিশনের মাধ্যমে রাজ্য সরকার চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করবে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদও আদালতে আবেদন করেছে, যাতে ‘দাগি’ বা অযোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের চাকরি বহাল রাখা যায়।

জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকিতে দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানাবার ঘোষণা যোগীর

শিক্ষাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। অনেকে এই রায়কে “মৃত্যুদণ্ডের সমান” বলে অভিহিত করেছেন। একজন শিক্ষক, রিজিয়া খাতুন, বলেন, “একজন মানুষ কতবার পরীক্ষা দেবে? আমরা যোগ্য, তবু আমাদের চাকরি গেল।” আরেকজন শিক্ষক বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে সততার কোনো দাম নেই।” কেউ কেউ দিল্লির যন্তরমন্তরে অবস্থান শুরু করেছেন, চাকরি ফেরানোর দাবিতে।

শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব

মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, এই রায়ের ফলে রাজ্যের ৯,৪৮৭টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৬,৯৫২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দেখা দেবে। অনেক স্কুলে পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকবেন না, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পর্ষদ আদালতে আবেদন করেছে, যাতে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি বহাল রাখা হয়।

আইনি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায়ের পর থেকে চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, “আমরা যোগ্যদের চাকরি ফেরানোর জন্য লড়ব।” তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রায়কে “ত্রুটিপূর্ণ” বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিসভার সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন।

২০১৬ সালের SSC প্যানেল বাতিলের ফলে শিক্ষাকর্মীদের জীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিম সাময়িক স্বস্তি দিলেও, রিভিউ পিটিশন এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াই এই সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। আগামী দিনে আদালতের সিদ্ধান্ত এবং রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।