নয়াদিল্লি, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারত সরকারের তীব্র প্রচেষ্টার ফলে পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী বিজয় মাল্য এবং নীরব মোদীর (Mallya Nirav Modi) ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ আরও সুগম হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (CPS)-এর একটি প্রতিনিধি দল দিল্লির তিহাড় জেল পরিদর্শন করেছে।
এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল জেলের পরিবেশ এবং বন্দীদের জন্য সুবিধাগুলি মূল্যায়ন করা, যাতে যুক্তরাজ্যের আদালতগুলিকে আশ্বস্ত করা যায় মাল্য এবং মোদী কে নিরাপদ ও মানবিক পরিবেশে রাখা হবে। ভারত সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজনে তিহাড় জেলে উচ্চ-প্রোফাইল বন্দীদের জন্য বিশেষ ‘এনক্লেভ’ তৈরি করা হবে। এই পদক্ষেপ ভারতের পলাতক অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য মোদী সরকারের অটল প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
নগত জুলাই মাসে সিপিএস-এর চার সদস্যের একটি দল, যার মধ্যে দুজন ব্রিটিশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা ছিলেন, তিহাড় জেলের উচ্চ নিরাপত্তা ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। তারা বন্দীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং জেলের সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন। সূত্র জানায়, প্রতিনিধি দল জেলের সার্বিক পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে এবং এটিকে ‘আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি’ বলে মন্তব্য করেছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সিপিএস দলকে আশ্বাস দিয়েছে যে প্রত্যর্পিত ব্যক্তিরা কোনও শারীরিক নির্যাতন বা অবৈধ জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হবেন না। এছাড়া, উচ্চ-প্রোফাইল বন্দীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি পৃথক ‘এনক্লেভ’ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বিজয় মাল্য, প্রাক্তন কিংফিশার এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান, ৯,০০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের আদালত তাঁর প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিলেও, তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন সহ বিভিন্ন আইনি পন্থার মাধ্যমে এটি বিলম্বিত করছেন।
অন্যদিকে, নীরব মোদী, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১৩,৮০০ কোটি টাকার জালিয়াতি মামলার প্রধান অভিযুক্ত, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের হেফাজতে রয়েছেন। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের আদালতগুলি পূর্বে ভারতীয় জেলের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, যা প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে।
ভারত বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ১৭৮টি প্রত্যর্পণের অনুরোধ করেছে, যার মধ্যে প্রায় ২০টি ইংল্যান্ডে রয়েছে। এই তালিকায় বিজয় মাল্য, নীরব মোদী ছাড়াও অস্ত্র ব্যবসায়ী সঞ্জয় ভাণ্ডারী এবং বেশ কয়েকজন খালিস্তানি নেতা রয়েছেন।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট সঞ্জয় ভাণ্ডারীর প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করে, তিহাড় জেলে নির্যাতন ও নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে। এই রায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে সিপিএস-এর তিহাড় পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ভারত সরকার ইংল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্বাস দিয়েছে যে প্রত্যর্পিত ব্যক্তিদের তিহাড় জেলে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অবৈধ জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হবে না। এই আশ্বাস ইউরোপীয় কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর)-এর ৩ নম্বর ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বন্দীদের নির্যাতন বা অমানবিক আচরণ নিষিদ্ধ করে।
সিপিএস দলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদেশ মন্ত্রণালয় এবং তিহাড় জেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে, যেখানে প্রত্যর্পণের আইনি প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত জুলাই মাসে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
কলকাতায় জন্মদিনের পার্টিতে গণধর্ষণের শিকার তরুণী
তিহাড় জেল পরিদর্শন এই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা যুক্তরাজ্যের আদালতের উদ্বেগ দূর করতে এবং প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।