দেশের প্রথম টেম্পার্ড গ্লাস কারখানায় আরও এক ধাপ এগিয়ে মেক ইন ইন্ডিয়া

ভারতের কেন্দ্রীয় রেল, তথ্য ও সম্প্রচার এবং ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সম্প্রতি দেশের প্রথম (Make In India) টেম্পার্ড গ্লাস উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন…

Make In India

ভারতের কেন্দ্রীয় রেল, তথ্য ও সম্প্রচার এবং ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সম্প্রতি দেশের প্রথম (Make In India) টেম্পার্ড গ্লাস উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন করেছেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির অধীনে ভারতের ইলেকট্রনিক উৎপাদন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এই উদ্যোগ ভারতকে বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে একটি বড় পদক্ষেপ।”

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চালু করা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি ভারতকে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল বিনিয়োগকে সহজতর করা, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিল্পের জন্য আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করা।

   

মন্ত্রী বৈষ্ণব জানান, এই কর্মসূচির ফলে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৪ সালে যেখানে ভারতে মাত্র দুটি মোবাইল উৎপাদন ইউনিট ছিল, সেখানে ২০২৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ২০০-এ পৌঁছেছে। এর ফলে ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

টেম্পার্ড গ্লাস উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন ভারতের ইলেকট্রনিক উৎপাদন খাতে আরেকটি মাইলফলক। এই কারখানা ভারতের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য উচ্চমানের টেম্পার্ড গ্লাস উৎপাদন করবে, যা দেশীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রফতানি সম্ভাবনাও বাড়াবে।

মন্ত্রী বৈষ্ণব জানান, এই উদ্যোগ ভারতকে ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির অধীনে ইলেকট্রনিক উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি কেবল মোবাইল ফোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সেমিকন্ডাক্টর, ইলেকট্রিক যানবাহন (ইভি), এবং অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তির পণ্যের উৎপাদনেও ভারত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছিলেন যে, ভারত সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই খাতে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষিত হয়েছে, এবং পাঁচটি নতুন সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট প্রতিদিন ৭ কোটিরও বেশি চিপ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে।

ইলেকট্রিক যানবাহন শিল্পেও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। ২০১৪ সালে এই শিল্প প্রায় অস্তিত্বহীন ছিল, কিন্তু ২০২৪ সালের মধ্যে এটি ৩ বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রসার এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হবে। মন্ত্রী বৈষ্ণব জানান, এই ধরনের উদ্যোগ ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।

Advertisements

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির ফলে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে, বার্ষিক এফডিআই দ্বিগুণ হয়ে ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এই বিনিয়োগ বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, এবং প্রতিরক্ষায় প্রবাহিত হয়েছে।

এছাড়া, ভারতের রপ্তানি ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল ফোন রপ্তানি ২০১৪ সালে ১,৫৫৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১.২ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ভারতের অর্থনৈতিক শক্তির প্রমাণ।

টেম্পার্ড গ্লাস উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বৈষ্ণব আরও বলেন, “এই কারখানা কেবল উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াবে না, বরং স্থানীয় শিল্প ও কারিগরদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। আমরা ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো ইফেক্ট’ মন্ত্রের মাধ্যমে উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার দিকেও মনোযোগ দিচ্ছি।” এই কারখানা ভারতের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দেশের তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করবে।

‘শেষে জিতবে আমেরিকাই’: আদালতের রায় আসতেই কড়া প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পের

প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারত এখন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দিকে এগিয়ে চলেছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি ভারতের শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত শুধু নিজের জন্যই নয়, বিশ্বের জন্যও উৎপাদনের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।