জনতা দলে বড় ধাক্কা, ওয়াকফের বিরোধিতায় পদত্যাগ রাজু নায়ারের

জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডি(ইউ) পার্টির জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা হিসেবে, এম রাজু নায়ার (raju nayar) পদত্যাগ করেছেন। তিনি ওয়াকফ সংশোধন বিলের প্রতি দলের সমর্থনের…

raju nayar on waqf

জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডি(ইউ) পার্টির জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা হিসেবে, এম রাজু নায়ার (raju nayar) পদত্যাগ করেছেন। তিনি ওয়াকফ সংশোধন বিলের প্রতি দলের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগকারী চতুর্থ নেতা হয়েছেন। এর আগে তিনজন মুসলিম নেতা একই কারণে দল ছেড়েছেন। এই ঘটনা বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেডি(ইউ)-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঘটেছে।

   

রাজু নায়ার (raju nayar) তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন

রাজু নায়ার (raju nayar) তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, “লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধন বিল পাস হওয়ার পর এবং জেডি(ইউ)-এর সমর্থনের কারণে আমি দল থেকে পদত্যাগ করছি।” তিনি দলের প্রতি তাঁর গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এই কালো আইনের পক্ষে জেডি(ইউ)-এর ভোট দেওয়ায় আমি গভীরভাবে আহত হয়েছি, যা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমি জেডি(ইউ) যুব শাখার প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক পদ এবং দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করছি। আমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে আমাকে সমস্ত দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এর আগে, তিনজন জেডি(ইউ) নেতা—তাবরেজ সিদ্দিকি আলিগ, মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মালিক এবং মোহাম্মদ কাসিম আনসারি—একইভাবে ওয়াকফ সংশোধন বিলের প্রতি দলের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তাবরেজ সিদ্দিকি আলিগ জেডি(ইউ) জাতীয় সভাপতি তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্দেশে লেখা একটি চিঠিতে গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, “দলটি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”

তৃণমূল ফ্রিহ্যান্ড দিলে অযোগ্যদের নাম বার করে দেব: অভিজিৎ

মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মালিক তাঁর চিঠিতে লিখেছেন

মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মালিক তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, “আমাদের মতো লক্ষ লক্ষ ভারতীয় মুসলমানের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে আপনি একটি সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের পতাকাবাহী। কিন্তু এখন এই বিশ্বাস ভেঙে গেছে।” মোহাম্মদ কাসিম আনসারি জানিয়েছেন, “ওয়াকফ সংশোধন বিলের প্রতি দলের অবস্থান লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।”

এই পদত্যাগগুলির পটভূমিতে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল, বিজেপির মিত্র এবং সংসদ সদস্যদের ওয়াকফ সংশোধন বিলের বিরোধিতা করার আহ্বান জানিয়েছিল। তারা যুক্তি দিয়েছে যে এই বিল মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসনের ওপর আঘাত হানে।

শুক্রবার ভোরে সংসদে তীব্র বিতর্কের পর ওয়াকফ সংশোধন বিল ২০২৫ পাস হয়েছে। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় জানিয়েছেন, “১২৮ জন সায় দিয়েছেন, ৯৫ জন বিরোধিতা করেছেন, কেউ অনুপস্থিত ছিলেন না। বিলটি পাস হয়েছে।” এছাড়াও, মুসলমান ওয়াকফ (রিপিল) বিল, ২০২৪ সংসদে পাস হয়েছে।

Advertisements

সরকার দাবি করেছে

এই বিলটি ওয়াকফ সম্পত্তির পরিচালনাকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে আনা হয়েছে বলে সরকার দাবি করেছে। তবে, বিরোধী দলগুলি এটিকে সংবিধানবিরোধী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করেছে।
জেডি(ইউ)-এর জন্য এই পদত্যাগগুলি একটি গুরুতর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। বিহারে মুসলিম ভোটাররা দীর্ঘদিন ধরে নীতীশ কুমারের দলের একটি শক্ত ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু ওয়াকফ বিলের প্রতি দলের সমর্থন এই সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দলের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে। নীতীশ কুমার, যিনি জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং রাম মনোহর লোহিয়ার আদর্শ অনুসরণ করার দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজের জন্য পরিচিত। তবে, বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকা সত্ত্বেও তিনি মুসলিম ভোট ধরে রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। সম্প্রতি, তিনি একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার সময় মুসলিম ভোটের প্রতি তাঁর সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরেছিলেন।

জেডি(ইউ)-এর জাতীয় মুখপাত্র রাজীব রঞ্জন প্রসাদ এই পদত্যাগগুলির বিষয়ে বলেছেন

জেডি(ইউ)-এর জাতীয় মুখপাত্র রাজীব রঞ্জন প্রসাদ এই পদত্যাগগুলির বিষয়ে বলেছেন, “যাঁরা পদত্যাগের দাবি করছেন, তাঁরা কখনও আমাদের দলের সদস্য ছিলেন না। তবে আমরা স্বীকার করি যে আমাদের কিছু প্রকৃত সদস্য, যেমন জাতীয় সাধারণ সম্পাদক গুলাম রসুল বালিয়াওয়ি, বিলটি পাস হওয়ায় খুশি নন। তাঁদের অভিযোগ যথাযথ স্তরে সমাধান করা হবে।” তবে, এই বিতর্কের মধ্যেও দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), কংগ্রেস এবং বামপন্থীরা, এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে জেডি(ইউ)-কে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। তারা মুসলিম ভোটকে মহাগঠবন্ধনের পক্ষে একত্রিত করার আশা করছে। এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “জেডি(ইউ) মুসলিমদের বিশ্বাস হারিয়েছে। এটি নীতীশ কুমারের জন্য বড় ধাক্কা।” অন্য একজন লিখেছেন, “ওয়াকফ বিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।”

এই পদত্যাগগুলি জেডি(ইউ)-এর জন্য একটি সতর্কতা হিসেবে কাজ করতে পারে। বিহারের রাজনীতিতে মুসলিম ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং এই সম্প্রদায়ের অসন্তোষ দলের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।