সিবিএসই-এর নতুন নির্দেশিকায় এসেছে বড় রদবদল, জেনে নিন

কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (CBSE) বড়সড় রদবদল আনতে চলেছে তাদের নির্দেশিকায়। বোর্ড দশম শ্রেণির পরীক্ষা বছরে দুবার আয়োজনের জন্য একটি খসড়া নীতি অনুমোদন করেছে, যা…

CBSE new rules for exams

কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (CBSE) বড়সড় রদবদল আনতে চলেছে তাদের নির্দেশিকায়। বোর্ড দশম শ্রেণির পরীক্ষা বছরে দুবার আয়োজনের জন্য একটি খসড়া নীতি অনুমোদন করেছে, যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। এই নতুন নির্দেশিকা অনুসারে, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বছরে দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে, যা তাদের পড়াশোনার চাপ কমাতে এবং আরও ভালো ফলাফলের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
তবে, অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন (CBSE) এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা বছরে একবারই নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) ২০২০-এর সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বোর্ড পরীক্ষার ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ প্রকৃতি হ্রাস করার উপর জোর দেয়। এই ঘোষণা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নতুন নির্দেশিকার বিবরণ

সিবিএসই-এর (CBSE) খসড়া নীতি অনুসারে, দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বটি ২০২৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্বটি ৫ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত চলবে। উভয় পরীক্ষাই সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রমের উপর ভিত্তি করে হবে, এবং শিক্ষার্থীরা উভয় পরীক্ষায় একই পরীক্ষা কেন্দ্রে অংশ নেবেন। পরীক্ষার ফি বাড়ানো হবে এবং উভয় পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় এই ফি সংগ্রহ করা হবে।

   

এই নতুন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা বছরে একবারই হবে। এর অর্থ হলো শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া হবে না। সিবিএসই-এর(CBSE) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “উভয় পরীক্ষাই সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রমের উপর হবে, তবে ব্যবহারিক এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন বছরে একবারই হবে।” এই সিদ্ধান্তটি পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রশাসনিক জটিলতা কমানো যায়।

শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ (CBSE) 

এই নতুন ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানো এবং তাদের আরও ভালো ফলাফলের সুযোগ দেওয়া। শিক্ষার্থীরা উভয় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন এবং তাদের সেরা স্কোরটি গ্রহণ করা হবে। যদি কোনো শিক্ষার্থী প্রথম পরীক্ষায় কোনো বিষয়ে সন্তুষ্ট হন, তবে তিনি দ্বিতীয় পরীক্ষায় সেই বিষয়টি বাদ দিতে পারবেন (CBSE) । তবে, যদি কোনো শিক্ষার্থী প্রথম পরীক্ষায় সব বিষয়ে অংশ নেন, তবে দ্বিতীয় পরীক্ষায় তিনি একই বিষয়গুলোতেই অংশ নিতে পারবেন।

মার্কশিট এবং পাশের সার্টিফিকেট শুধুমাত্র মে মাসের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পরই জারি করা হবে। এই নথিতে উভয় পরীক্ষার স্কোর (যদি শিক্ষার্থী উভয় পরীক্ষায় অংশ নেন) এবং প্রতিটি বিষয়ের সেরা স্কোর উল্লেখ থাকবে। এই ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে এবং তাদের সেরা পারফরম্যান্স প্রদর্শনের সুযোগ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য

এই সিদ্ধান্তটি জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) ২০২০-এর সুপারিশের অংশ, যা বোর্ড পরীক্ষার ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ দিকটি দূর করার উপর জোর দেয়। এনইপি-র লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চাপমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের দক্ষতা এবং সম্ভাবনা প্রকাশ করতে পারে।

দুটি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সিবিএসই (CBSE) এই লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, “এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাবে এবং তাদের একাধিক সুযোগ প্রদান করবে।”

পরীক্ষার সময়সূচি ও বিষয় বিন্যাস

খসড়া নীতি অনুসারে, বিষয়গুলোকে সাতটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে: ভাষা ১ (ইংরেজি), ভাষা ২ (হিন্দি), ঐচ্ছিক বিষয় ১ (বিজ্ঞান), ঐচ্ছিক বিষয় ২ (গণিত), ঐচ্ছিক বিষয় ৩ (সমাজবিজ্ঞান), আঞ্চলিক ও বিদেশি ভাষা এবং অবশিষ্ট বিষয়। মূল বিষয়গুলোর (যেমন বিজ্ঞান, গণিত, সমাজবিজ্ঞান, হিন্দি, ইংরেজি) পরীক্ষা উভয় পর্বে নির্দিষ্ট তারিখে অনুষ্ঠিত হবে, তবে অন্যান্য বিষয়গুলোর পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে দুই থেকে তিন দিনে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

Advertisements

শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা (এলওসি) পূর্ববর্তী বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চূড়ান্ত করা হবে। দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য নতুন কোনো প্রার্থীর নাম যোগ করা যাবে না। তবে, শিক্ষার্থীরা প্রথম পরীক্ষায় কোনো বিষয় বাদ দিয়ে দ্বিতীয় পরীক্ষায় ভিন্ন বিষয় বেছে নিতে পারবেন।

জনমত সংগ্রহ

সিবিএসই (CBSE) এই খসড়া নীতিটি জনসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করেছে। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা ৯ মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত তাদের মতামত জমা দিতে পারবেন। এই প্রতিক্রিয়াগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নীতিটি চূড়ান্ত করা হবে। সিবিএসই-এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সন্যম ভারদ্বাজ বলেন, “প্রতিক্রিয়াগুলো বিশ্লেষণ করা হবে এবং তারপর নীতিটি চূড়ান্ত করা হবে।”

মহরমের ১০ দিন কলকাতায় বন্ধ থাকবে বিভিন্ন রাস্তা, জারি ট্রাফিক বিধি

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া

এই নতুন ব্যবস্থা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। দিল্লির একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল সুধা আচার্য বলেন, “এই দ্বৈত পরীক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক কারণ এটি পরীক্ষার চাপ কমায় এবং একাধিক সুযোগ প্রদান করে।” শিক্ষার্থীরাও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ এটি তাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন, দুটি পরীক্ষার ব্যবস্থা প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। সংসদীয় কমিটি এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, অ-মূল বিষয়গুলোর পরীক্ষা দুই থেকে তিন দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে অনিয়মের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

সিবিএসই-এর (CBSE) এই নতুন নির্দেশিকা দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষাকে আরও শিক্ষার্থীবান্ধব এবং নমনীয় করার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন বছরে একবারই হওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক জটিলতা কমাবে, যখন দুটি পরীক্ষার সুযোগ শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

এই সংস্কার জাতীয় শিক্ষানীতির লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সঠিক পরিকল্পনা এবং কঠোর তদারকির উপর।