এনকাউন্টারে মৃত্যু গণধর্ষন মামলার মূল অভিযুক্তর

উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের কাছে মলিহাবাদ এলাকায় এক নারীর গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত এক অভিযুক্তকে পুলিশ শুক্রবার রাতে এনকাউন্টারে (Encounter) হত্যা করেছে। শনিবার সকালে পুলিশের…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/police-1.jpg

উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের কাছে মলিহাবাদ এলাকায় এক নারীর গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত এক অভিযুক্তকে পুলিশ শুক্রবার রাতে এনকাউন্টারে (Encounter) হত্যা করেছে। শনিবার সকালে পুলিশের এক কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত অভিযুক্তের নাম অজয় দ্বিবেদী। এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত, দীনেশ কুমার দ্বিবেদী, ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত নারী তার ভাইয়ের বাড়ি চিনহাটে যাওয়ার পথে ছিলেন, কিন্তু অভিযুক্তরা তাকে ভুল পথে মলিহাবাদে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করে।

ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (ডিসিপি) বিশ্বজিৎ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় এক গোপন সূত্র থেকে খবর পাওয়া যায় যে অজয় দ্বিবেদী লখনউ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। এরপর পুলিশ দেবম হোটেলের কাছে একটি চেকপোস্ট স্থাপন করে। রাত ৯:৩০ নাগাদ অভিযুক্তকে মোটরসাইকেলে চড়ে আসতে দেখা যায়। “যখন তাকে থামানোর চেষ্টা করা হয়, তখন সে পালানোর চেষ্টা করে। তার মোটরসাইকেল স্কিড করে পড়ে যায়। সে পুলিশের উপর গুলি চালায়। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়,” বলেন ডিসিপি শ্রীবাস্তব। গুলিবিদ্ধ অভিযুক্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

   

ঘটনার বিবরণ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত নারী (বয়স ৩২) গত ১৮ মার্চ ভোরে বারাণসী থেকে লখনউ পৌঁছেছিলেন। তিনি একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে ফিরছিলেন এবং আলমবাগ থেকে একটি অটোরিকশায় উঠে চিনহাটে তার ভাইয়ের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু অটোরিকশা চালক অজয় দ্বিবেদী এবং তার ভাই দীনেশ তাকে ভুল পথে মলিহাবাদের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে একটি আমবাগানে তাকে গণধর্ষণ করা হয় এবং প্রতিরোধ করায় গলা টিপে হত্যা করা হয়। নারীর মোবাইল ফোনটিও অভিযুক্তরা নিয়ে পালিয়েছিল, যা পরে অজয়ের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
নারীর ভাই ভোর ৪টায় বোনের নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশের জরুরি নম্বর ১১২-এ জানান। তিনি জানান, তার বোন তাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে অটো চালক ভুল রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে বলে তার সন্দেহ হচ্ছে। শেষবার তার অবস্থান মলিহাবাদের কাছে মোহাম্মদ নগর তালুকদারি এলাকায় দেখা গিয়েছিল। পুলিশ তৎক্ষণাৎ তিনটি দল গঠন করে খোঁজ শুরু করে। বুধবার ভোরে মলিহাবাদের একটি আমবাগানে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisements

তদন্ত ও গ্রেপ্তার
প্রাথমিক তদন্তে গণধর্ষণ ও হত্যার প্রমান পাওয়ায় ভারতীয় সংবিধানের (বিএনএস) সংশ্লিষ্ট ধারায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। শুক্রবার সকালে ইলেকট্রনিক নজরদারির মাধ্যমে দীনেশ কুমার দ্বিবেদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জিজ্ঞাসাবাদের পর অজয়ের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। পুলিশ অজয়ের গ্রেপ্তারে ১ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। শুক্রবার রাতে এনকাউন্টারের মাধ্যমে অজয় নিহত হয়। ডিসিপি শ্রীবাস্তব জানান, “অভিযুক্ত মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টা করছিল। পুলিশের উপর গুলি চালানোর পর আত্মরক্ষায় পুলিশও গুলি চালায়। তার আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলছে।” তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় জড়িত অন্য কোনো ব্যক্তি থাকলে তাদেরও শনাক্ত করা হবে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
এই ঘটনা লখনউয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা নারী নিরাপত্তা ও পুলিশি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন বাসিন্দা বলেন, “এত বড় শহরে এমন ঘটনা ঘটছে, এটা লজ্জার। অটো চালকদের পটভূমি যাচাই করা উচিত।” আরেকজন বলেন, “পুলিশ এনকাউন্টার করেছে ঠিকই, কিন্তু এই ধরনের অপরাধ রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?” বিরোধী দলগুলো এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, “এনকাউন্টার দিয়ে দায়িত্ব শেষ হয় না। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের গাফিলতি ধরা পড়ায় সাতজন পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন স্টেশন হাউস অফিসার (এসএইচও) রয়েছেন। ডিসিপি ক্রাইম কমলেশ কুমার দীক্ষিত জানান, “নারীর পরিবার জরুরি নম্বরে অভিযোগ করার পরও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।”

সমাজে প্রভাব
এই ঘটনা নারী নিরাপত্তার প্রশ্নকে আবারও সামনে এনেছে। লখনউয়ের মতো বড় শহরে অটোরিকশার মতো গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহন চালকদের পটভূমি যাচাই এবং নিয়মিত নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া, রাতের বেলা নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি উঠেছে।

মলিহাবাদের এই নৃশংস ঘটনা এবং তারপর পুলিশের এনকাউন্টার উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা ও নারী নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে। অভিযুক্ত অজয় দ্বিবেদীর মৃত্যু এবং দীনেশের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তদন্ত একটি পর্যায়ে পৌঁছলেও, এই ধরনের অপরাধ রোধে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট। সমাজ ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।