নয়াদিল্লি: “আজ আমি যা বলতে চাই, তা বলতে পারি না দেশ এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে” (Maulana Mahmood Madani)এভাবেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ জানালেন জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ-এর সভাপতি মৌলানা মাহমুদ মাদানি। সম্প্রতি ‘জিহাদ’ সম্পর্কিত তাঁর মন্তব্য নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কের পর এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট জানালেন তিনি কোনও ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে কথা বলছেন না, বরং একটি সম্প্রদায়ের অনুভূতি ও আশঙ্কার প্রতিনিধিত্ব করছেন।
মাদানির বক্তব্য, “আপনি আমাকে অভিযুক্ত করছেন যে আমি সুপ্রিম কোর্টকে ভুল বলেছি। আমি একজন ব্যক্তি নই, আমি একটি সংগঠনের প্রতিনিধি, যে সংগঠন একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অনুভূতির প্রতিফলন। যদি আমি আমাদের সম্প্রদায়ের কথা দেশকে না বলি, তবে সেটা অন্যায় হবে।” সাক্ষাৎকারে মাদানি বলেন, সংবিধানের মূল ভাবনা সংখ্যাগরিষ্ঠতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, “দেশের এমন কিছু জায়গায় আমরা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছি, যেখানে মনে হয় আমাদের নিরাপত্তাহীনতা আপনি বুঝবেন শুধু তখনই, যখন আপনি একজন মুসলিম হবেন।”
থ্রি নট থ্রি-র যুগ শেষ! AK-47–এর মডার্ন ভার্সন আসছে কলকাতা পুলিশের হাতে
তিনি আরও বলেন, বহুদিন ধরে তাঁরা চেষ্টা করছেন তাঁদের উদ্বেগ দেশ ও সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরতে। “যদি আমাদের উদ্বেগকেই দেশদ্রোহিতা বলে প্রমাণ করা হয়, তবে তা অত্যন্ত ভুল হবে।” মাদানির দাবি, বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে দেশের এক বড় অংশের মানুষ মাথা তুলেও কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। “আজ আমি যদি কিছু বলতে চাই, পারি না। পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে আমরা সতর্কবার্তা দিতে চাই। যদি পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক হয়, তবে দেশকে তা বুঝতে হবে। আর যদি না হয়, তাও বুঝতে হবে।”
তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন “আমরা দেশের ৬০ শতাংশ ‘সাইলেন্ট মেজরিটি’-র সঙ্গে কথা বলতে চাই। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের উদ্বেগ, আমাদের আশঙ্কা, আমাদের অনুভূতি জানাতে চাই।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক কয়েকটি বিচারিক মন্তব্য, নাগরিকত্ব বিতর্ক, এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে মেরুকরণ এসবের মধ্যেই মাদানির বক্তব্য একটি বড় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকেত।
অনেকেই বলছেন, মাদানির কথায় যে দুঃশ্চিন্তার ইঙ্গিত রয়েছে, তা শুধু সম্প্রদায়গত সমস্যাই নয় বরং বৃহত্তর গণতান্ত্রিক স্পেস নিয়ে প্রশ্ন। একাধিক ইসলামী সংগঠনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যাচ্ছে মাদানির বক্তব্যকে তাঁরা ‘অ্যালার্ম সিগন্যাল’ হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহলের এক অংশ মনে করছে, গেরুয়া শিবিরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কৌশল এবং ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগের মাঝেই মাদানির এই বক্তব্য বিতর্ক আরও উস্কে দিতে পারে। সাক্ষাৎকারের শেষ পর্বে মাদানি বলেন, “আমি আপনাকে সম্মান করি যে আপনি আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন।
কিন্তু আমরা আজ যে অবস্থায় আছি, তা দেশের সামনে তুলে ধরা আমার দায়িত্ব। আমি ভয় দেখাতে চাই না, আমি সতর্ক করতে চাই।” ব্যাপক আলোচনার মাঝেই তাঁর এই মন্তব্য এখন দেশজুড়ে নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। দেশের সংখ্যালঘু মানসিকতা, বিচারব্যবস্থা, এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সবই নতুন করে আলোচনায় এসে পড়েছে তাঁর সাক্ষাৎকারের পর।
