১০ জনের মৃত্যু,মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা-আগামী ৪৮ ঘণ্টা সংকটজনক

মহারাষ্ট্র জুড়ে টানা প্রবল বর্ষণের (Maharashtra Rains) জেরে মঙ্গলবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল জনজীবন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। মুম্বই মহানগরীতে…

১০ জনের মৃত্যু,মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা-আগামী ৪৮ ঘণ্টা সংকটজনক

মহারাষ্ট্র জুড়ে টানা প্রবল বর্ষণের (Maharashtra Rains) জেরে মঙ্গলবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল জনজীবন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। মুম্বই মহানগরীতে রেল ও বিমান পরিষেবা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, বহু জায়গায় জল জমে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যানবাহন চলাচল। নানদেড় জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত আটজন। অন্যদিকে গড়চিরোলি, রত্নাগিরি, সিন্ধুদুর্গ, ঠাকুরসহ একাধিক জেলায় তীব্র জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরের সঙ্গে বৈঠক করে জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টা বিশেষত মুম্বই, ঠাকুর, রায়গড়, রত্নাগিরি ও সিন্ধুদুর্গ জেলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন নদী বিপজ্জনক স্তরে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গবাদি পশুর মৃত্যু, ফসলের ক্ষতি বা বাড়িঘর ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রে এনডিআরএফ-এর নিয়ম মেনে সাহায্য দেওয়া হবে।

   

গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে রেকর্ড ৩০০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। শহরের একাধিক নিচু এলাকায় জল জমে রেললাইন ও সড়ক প্লাবিত হয়েছে। সেন্ট্রাল রেলওয়ে মূল লাইন ও হারবার লাইনের পরিষেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ভিখরোলি উপশহরে সর্বোচ্চ ২৫৫.৫ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বোম্বে হাইকোর্ট দুপুর ১২.৩০ পর্যন্ত কাজ চালাতে পেরেছে, তারপরই অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৃহন্মুম্বই পুরসভা সমস্ত সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। স্কুল ও কলেজও বন্ধ রাখা হয়েছে।

মুম্বইয়ের জনপরিবহন পরিষেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অন্তত আটটি ফ্লাইট অন্যত্র ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বহু বিমান দেরি করছে। একটি মনোরেল ট্রেন বিদ্যুতের সমস্যার কারণে মাঝপথে দাঁড়িয়ে যায়, তাতে প্রায় ২০০ যাত্রী ছিলেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়।

Advertisements

নানদেড় জেলায় টানা বৃষ্টিতে ২৯০ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুকেদ-উদগির সড়কে একটি অটোরিকশা ও একটি গাড়ি বন্যার জলে ভেসে যায়, যেখানে অন্তত চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে গড়চিরোলিতে এক যুবক জোড়া স্রোতে ভেসে মারা গেছেন। চন্দ্রপুর জেলার ভদ্রাবতী সেতু থেকে পড়ে গিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

প্রবল বর্ষণে প্রায় ১২ থেকে ১৪ লক্ষ একর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার জানান, এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০ লক্ষ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। নদীগুলির অনিয়ন্ত্রিত জলাধার প্রশাসনের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।

ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও মৌসুমি বায়ুর শক্তিশালী প্রভাবে এই প্রবল বর্ষণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী দুদিন কোকণ উপকূল ও মুম্বই অঞ্চলে অতি ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। মুম্বই, ঠাকুর, রায়গড়, রত্নাগিরি ও সিন্ধুদুর্গ জেলায় ইতিমধ্যেই ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। বিদর্ভ ও মরাঠওয়াড়ায় আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমে ‘অরেঞ্জ’ ও পরে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’-এ নামবে বলে আশা।