মহারাষ্ট্রের নভেম্বর ২০২৪-এর বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (rahul-gandhi) ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে বিজেপি একটি ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ কৌশলের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে।
মহাযুতি জোট, যার মধ্যে রয়েছে বিজেপি, একনাথ শিন্ডে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা এবং অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), ২৮৮টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২৩৫টি আসন দখল করেছে। এর মধ্যে বিজেপি একাই ১৩২টি আসন জিতেছে, যা রাজ্যের ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য।
রাহুল গান্ধী, (rahul-gandhi)‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দাবি করেছেন যে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করতে পাঁচ ধাপের একটি কৌশল ব্যবহার করেছে।
How to steal an election?
Maharashtra assembly elections in 2024 were a blueprint for rigging democracy.
My article shows how this happened, step by step:
Step 1: Rig the panel for appointing the Election Commission
Step 2: Add fake voters to the roll
Step 3: Inflate voter… pic.twitter.com/ntCwtPVXTu— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) June 7, 2025
তিনি (rahul-gandhi)লিখেছেন, “ধাপ ১: নির্বাচন কমিশন নিয়োগের প্যানেলে হেরফের, ধাপ ২: ভোটার তালিকায় জাল ভোটার যুক্ত করা, ধাপ ৩: ভোটার উপস্থিতি ফুলিয়ে দেখানো, ধাপ ৪: বিজেপির জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে জাল ভোট প্রয়োগ, ধাপ ৫: প্রমাণ লুকানো।”
২০২৪-এর নির্বাচনে বিজেপি যখন বিপুল জয় অর্জন করেছে, তখন বিরোধী মহা বিকাশ আঘাড়ি (এমভিএ), যার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা (ইউবিটি) এবং শরদ পাওয়ারের এনসিপি (এসপি), মাত্র ৫০টি আসনে সীমাবদ্ধ থেকেছে।
উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পাওয়ার, যারা ইতিমধ্যেই তাদের দল এবং প্রতীকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য এই ফলাফল ছিল মারাত্মক আঘাত। রাহুল গান্ধী তার নিবন্ধে লিখেছেন, “আমি ছোটো মাপের প্রতারণার কথা বলছি না, বরং আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলের মাধ্যমে শিল্প-স্কেলে নির্বাচনী জালিয়াতির কথা বলছি।”
‘ঘৃণ্য জঙ্গি সংগঠন JeM-কে নির্মূল করুক পাকিস্তান’, কড়া বার্তা আমেরিকার
নির্বাচন কমিশন নিয়োগে পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক (rahul-gandhi)
রাহুল গান্ধীর (rahul-gandhi) প্রথম অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২৩ সালের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে। এই আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটি থেকে ভারতের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, এই পরিবর্তন কার্যনির্বাহী শাখার পক্ষে ভারসাম্যকে পুরোপুরি ঝুঁকিয়ে দিয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “প্রধান বিচারপতির পরিবর্তে একজন মন্ত্রীকে নিয়োগ কমিটিতে রাখার সিদ্ধান্ত সন্দেহজনক। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে নিরপেক্ষ বিচারককে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কেন এত পরিশ্রম করা হবে? প্রশ্নটি করলেই উত্তর জানা যায়।” নির্বাচন কমিশন তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত এবং সাংবিধানিক আইনের প্রতি কঠোরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে।
ভোটার তালিকায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধির অভিযোগ
রাহুল গান্ধী (rahul-gandhi) আরও দাবি করেছেন যে মহারাষ্ট্রে ভোটার তালিকায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে মোট নিবন্ধিত ভোটার ছিল ৮.৯৮ কোটি, যা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বেড়ে ৯.২৯ কোটিতে পৌঁছায়, অর্থাৎ পাঁচ বছরে ৩১ লক্ষ বৃদ্ধি। কিন্তু নভেম্বরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে এই সংখ্যা আরও ৪১ লক্ষ বেড়ে ৯.৭০ কোটিতে পৌঁছেছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
বিজেপি এই অভিযোগকে খারিজ করে বলেছে, “এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগেও, যেখানে কংগ্রেস জিতেছিল, একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। এছাড়া, রাহুল গান্ধী নিজেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংখ্যা উল্লেখ করেছেন।” নির্বাচন কমিশন এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তরুণ ভোটারদের বৃদ্ধি এবং নতুন ভোটার নথিভুক্ত করার জন্য বিশেষ প্রচারাভিযানের কথা উল্লেখ করেছে। তবে রাহুল গান্ধী এই ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
বিজেপি রাহুল গান্ধীর (rahul-gandhi) অভিযোগকে ‘অপমানজনক’ বলে সমালোচনা করেছে। বিজেপির মুখপাত্র তুহিন সিনহা বলেছেন, “রাহুল গান্ধী দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অপমান করার জন্য তার পুরনো কৌশল নিয়ে ফিরে এসেছেন। নির্বাচন কমিশন এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে বারবার স্পষ্ট করেছে।”
নির্বাচনী ফলাফলের প্রভাব
মহারাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফল রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বিজেপি এবং তার মিত্রদের এই বিপুল জয় রাজ্যে তাদের আধিপত্যকে আরও শক্তিশালী করেছে। অন্যদিকে, বিরোধী জোট এমভিএ-র এই পরাজয় কংগ্রেস, শিবসেনা (ইউবিটি) এবং এনসিপি (এসপি)-র জন্য বড় ধাক্কা। বিশেষ করে উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পাওয়ারের জন্য, যারা তাদের দলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন, এই ফলাফল তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
রাহুল গান্ধীর (rahul-gandhi) এই অভিযোগগুলো মহারাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। তবে নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি উভয়ই এই অভিযোগগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে, যা আগামী দিনে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।