মদ পাচারকারীর লাথিতে পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু, জখম এক

মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) বুলঢানা জেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় একজন পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে এবং তার সহকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। রবিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে চিখলি তালুকার শেলগাঁও…

Maharashtra Cop

মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) বুলঢানা জেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় একজন পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে এবং তার সহকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। রবিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে চিখলি তালুকার শেলগাঁও আতোলের কাছে, যা আন্দেরা থানার এলাকার মধ্যে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, এক মদ পাচারকারীকে ধরতে গিয়ে তার দেওয়া লাথির আঘাতে তাদের মোটরবাইক থেকে পড়ে যান দুই পুলিশ সদস্য। এই ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মৃত কনস্টেবলের নাম ভগবত গিরি এবং আহত কনস্টেবলের নাম রাম আন্ধালে। তারা দুজনেই নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন। এমন সময় তাদের কাছে খবর আসে যে সঞ্জয় শিবঙ্কর নামে একজন অবৈধ মদ বিক্রেতা শেলগাঁও আতোলের দিকে এক বাক্স মদ নিয়ে আসছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা অভিযানে নামেন। পাচারকারীকে ধরতে গিয়ে তারা তাকে মোটরবাইক দিয়ে ধাওয়া করেন। কিন্তু ধাওয়ার মাঝপথে অভিযুক্ত সঞ্জয় শিবঙ্কর পুলিশের চলন্ত বাইকের দিকে লাথি ছুড়ে মারে। এর ফলে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই কনস্টেবল রাস্তায় পড়ে যান। এই দুর্ঘটনায় ভগবত গিরি ঘটনাস্থলেই মারা যান, আর রাম আন্ধালে গুরুতর আহত হন।

   

ঘটনার পরপরই আন্দেরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত রাম আন্ধালেকে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে ভগবত গিরির জন্য কিছু করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ অভিযুক্ত সঞ্জয় শিবঙ্করকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টা এবং অবৈধ মদ পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অভিযুক্তের কাছ থেকে জব্দ করা মদের বাক্সটিও তদন্তের অংশ হিসেবে পরীক্ষা করা হবে।

Advertisements

এই ঘটনা বুলঢানা জেলায় অবৈধ মদের ব্যবসা এবং তার সঙ্গে জড়িত অপরাধের গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শেলগাঁও আতোলের মতো গ্রামীণ এলাকায় অবৈধ মদের ব্যবসা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। এই ধরনের পাচার রোধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালালেও, এবারের মতো মর্মান্তিক ঘটনা তাদের কাজের ঝুঁকির মাত্রা সামনে এনেছে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “আমাদ রোজ টহল দিয়ে থাকি। কিন্তু এমন ঘটনা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ভগবত গিরির মৃত্যুতে তার পরিবার এবং সহকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার গ্রামে খবর পৌঁছতেই স্থানীয়রা শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুলিশ বিভাগও তাদের একজন সাহসী সদস্যকে হারিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। আহত রাম আন্ধালের চিকিৎসা চলছে এবং তার অবস্থা এখনও সংকটজনক বলে জানা গেছে।

এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ওপর চাপ বেড়েছে। বুলঢানা জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অবৈধ মদের ব্যবসা বন্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। “আমরা এই ধরনের অপরাধীদের কোনওভাবেই ছাড়ব না। আমাদের সহকর্মীর মৃত্যু আমাদের কাছে বড় ক্ষতি। এর জন্য দায়ীদের শাস্তি পেতেই হবে,” বলেন তিনি।

সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে অবৈধ মদের ব্যবসা বন্ধে সরকারের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত। এই ঘটনা কেবল পুলিশের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও একটি সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন অনেকে।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ভগবত গিরির মৃত্যুতে তার পরিবারের জন্য সরকারি সাহায্যের দাবি উঠেছে। তদন্ত শেষ হলে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ চিত্র সামনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।