মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দীর্ঘদিনের একটি উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় এবার মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার তাদের রাজ্যে গণেশ উৎসবে (Ganesh Utsav) ভজনী মণ্ডলগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পথে এগিয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্তটি সাম্প্রদায়িক সামঞ্জস্য ও ধর্মীয় উৎসবের প্রচারে নতুন আলোকপাত করেছে। শুক্রবার মহারাষ্ট্র সরকার ঘোষণা করেছে যে, তিনি ১,৮০০টি ভজনী মণ্ডলকে গণেশ উৎসবের জন্য প্রতিটি মণ্ডলের জন্য ২৫,০০০ টাকা করে অনুদান দেবে। এই উদ্যোগটির মোট ব্যয় প্রায় ৪৫ কোটি টাকা হবে, যা রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্থানীয় শিল্পীদের জীবিকা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
Also Read | লাভ জিহাদ! ধর্মান্তরে নারাজ অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি স্বামী মহম্মদের!
এই সিদ্ধান্তটি পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপের সঙ্গে তুলনীয়। গত জুলাই মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন যে, প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটিকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তটি তাঁর রাজ্যের সাংস্কৃতিক উৎসবকে সমৃদ্ধ করার প্রতিশ্রুতির একটি অংশ। মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার এখন এই মডেলটিকে গ্রহণ করে নিজেদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অজেন্ডার সঙ্গে মিশিয়ে তুলছে। এই পদক্ষেপটি বিজেপির সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারে, যারা দলটিকে ধর্মনিরপেক্ষতার অভিযোগে প্রায়ই কটাক্ষ করে।
গণেশ উৎসব, যা মহারাষ্ট্রে একটি রাষ্ট্রীয় উৎসব হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে (জুলাই ২০২৫-এ), হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই উৎসবটি লোকমান্য তিলকের নেতৃত্বে ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে সামাজিক ও রাজনৈতিক একতার জন্য পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। আজকের দিনে এটি মুম্বইয়ের মতো শহরে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে রঙিন ছোঁয়া ফেলে। প্রতি বছর মুম্বইয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার মূর্তি নদী ও সমুদ্রে ভাসানো হয়, যা পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে, সরকার এবার এই উৎসবকে আরও স্থায়ী ও সংস্কৃতিগতভাবে সমৃদ্ধ করার জন্য এই আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।
Also Read | মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মণিপুরের নির্বাচনে মুখে কুলুপ মোদীর-কটাক্ষ রাহুলের
এই সিদ্ধান্তটি সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আকর্ষণ করেছে। কিছু ব্যক্তি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, যারা মনে করেন যে ধর্মীয় উৎসবের জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা সামগ্রিকভাবে সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে। তবে, অন্যদের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ভজনী মণ্ডলগুলোকে টাকা দেওয়া ভালো, কিন্তু এটি করদাতাদের অর্থের অপব্যবহার নয় তো?” অন্যদিকে, একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “যদি হজ পড়ায় সরকারী সহায়তা দেওয়া যায়, তবে গণেশ উৎসবে কেন নয়? এটি দ্বিমুখী ধর্মনিরপেক্ষতা।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই অনুদানের আবেদন প্রক্রিয়া আজ সকাল ১:৪৪টায় শুরু হয়েছে, যা সকল ভজনী মণ্ডলের জন্য উন্মুক্ত। এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা নয়, বরং স্থানীয় শিল্পীদের জীবিকা রক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে, এই সিদ্ধান্তটি পরিবেশবাদীদের উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ বৃহৎ সংখ্যক মূর্তি নির্মাণ ও তাদের ভাসানো পরিবেশে ক্ষতি করতে পারে। সরকারকে এবার এই সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।
মহারাষ্ট্রের এই পদক্ষেপটি পশ্চিমবঙ্গের মডেলের সঙ্গে তুলনীয় হলেও, এর রাজনৈতিক প্রভাব বিভিন্ন। বিজেপি এই সিদ্ধান্তকে তাদের হিন্দুত্ববাদী অজেন্ডার সঙ্গে যুক্ত করতে পারে, যা তাদের সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, এটি তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যারা নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষক হিসেবে প্রকাশ করেন। তবে, যে কোনো ক্ষেত্রেই এই উদ্যোগটি ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার একটি প্রয়াস হিসেবে গৃহীত হচ্ছে।
গণেশ উৎসবের আগামী ২৭ আগস্ট থেকে শুরু হবে, এবং এই অনুদানের মাধ্যমে এটি আরও জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ও এর রাজনৈতিক ফলাফল সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ অনুসরণ করে বিজেপির এই পদক্ষেপ কি সত্যিই সাংস্কৃতিক একতা সৃষ্টি করবে, নাকি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করবে—এটি একটি প্রশ্ন যার উত্তর এখনও অপেক্ষারত।