কর্ণাটক: দীপাবলির উৎসব শেষে রাজ্যের গ্রামীণ প্রান্তে যখন ঐতিহ্যবাহী হোরি হাব্বা উৎসব চলছিল, তখন ঘটে গেল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। শিমোগা জেলার বল্লিগাভি এলাকায় অনুষ্ঠিত এই ষাঁড়ের দৌড় প্রতিযোগিতার সময় প্রাক্তন বিধায়ক মহালিঙ্গাপ্পা এক ষাঁড়ের আক্রমণে গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে ধরা পড়েছে সেই ভয়ংকর মুহূর্তের ভিডিও যেখানে দেখা যায়, এক সাদা-ধূসর ষাঁড় হঠাৎ কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ভিড়ের দিকে ছুটে আসে এবং তারপর সরাসরি প্রাক্তন বিধায়ককে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে।
ইন্দোর কাণ্ডে কড়া বার্তা বিসিসিআইয়ের, নিরাপত্তা প্রটোকল হবে আরও কঠোর
ঘটনাটি ঘটে যখন শিকারিপুরা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক মহালিঙ্গাপ্পা নিজের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উৎসব উপভোগ করছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ষাঁড়টি আচমকা দৌড়ে এসে তাঁকে দরজার ফ্রেমে চেপে ধরে শিং দিয়ে আঘাত করে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মহালিঙ্গাপ্পা প্রাণপণে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ষাঁড়ের আঘাতে তিনি মাটিতে ছিটকে পড়েন। তাঁর জামায় ষাঁড়টির শিং আটকে যায়, এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
তৎক্ষণাৎ স্থানীয়রা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শরীরে গুরুতর আঘাত থাকলেও তিনি আপাতত বিপন্মুক্ত। চিকিৎসার জন্য তাঁকে শিমোগা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হোরি হাব্বা কর্ণাটকের এক বিশেষ গ্রামীণ উৎসব, যা মূলত দীপাবলি পরবর্তী সময়ে পালিত হয়। এই উৎসবে সাজানো ষাঁড় ও গরুদের রাস্তার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়, এবং শত শত মানুষ তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এটি গ্রামীণ জনপদের সাহস, ঐতিহ্য ও কৃষিকেন্দ্রিক সংস্কৃতির প্রতীক বলে ধরা হয়। তবে প্রতিবছরই এই উৎসবে বহু দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েক দিন আগেই হাভেরি জেলায় এই হোরি উৎসব চলাকালীন চারজনের মৃত্যু হয়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, ওই দুর্ঘটনাগুলি হাভেরি ও তিলাভল্লি তহসিলের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে।
যদিও হোরি উৎসব কর্ণাটকের মানুষের মধ্যে গভীর আবেগের বিষয়, তবুও ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনার কারণে মানবাধিকার সংগঠন ও পশুপ্রেমী মহল বহুবার এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, উৎসবের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছিল, কিন্তু ষাঁড়ের আচমকা আচরণ অনুমান করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনার পর শিমোগা জেলায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা হাসপাতালে গিয়ে আহত মহালিঙ্গাপ্পার খোঁজ নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও জানানো হয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী উৎসবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে, কীভাবে ষাঁড়টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দর্শকসারিতে ঢুকে পড়ল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হোরি হাব্বা শুধুমাত্র একটি উৎসব নয় এটি কর্ণাটকের গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। তবে এবারের ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে, প্রাণহানির ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এই উৎসব কতটা নিরাপদ? ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংঘর্ষে আজ কর্ণাটকবাসী ভাবছে উৎসবের উচ্ছ্বাসের সঙ্গে কি একটু বেশি সাবধানতা জরুরি নয়?


