প্রত্যেক বছর মাঘ মাসে সারা দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পূণ্যার্থীরা সমবেত হন ভারতের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে—কুম্ভ মেলায়। কিন্তু এবার, ১৪৪ বছর পর, প্রয়াগরাজে বিশেষভাবে আয়োজিত হচ্ছে মহাকুম্ভ মেলা(Maha Kumbh) , যা আরও বড় ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ। মকর সংক্রান্তির দিন প্রায় সাড়ে তিন কোটি পূণ্যার্থী পূণ্যস্নান করেছিলেন, তবে মহাকুম্ভের অনুষ্ঠান এখনও চলতে থাকবে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত।
আজ, ১৭ জানুয়ারি, কুম্ভমেলায় ঘটতে চলেছে এক বিশেষ ঘটনা। ১৪৪ বছর পর, আজ থেকেই শুরু হবে সাধুদের নাগা সাধুতে উত্তীর্ণ হওয়ার পবিত্র প্রক্রিয়া। এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ একে নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে ধর্মীয় অঙ্গনে।
নাগা সাধুর দীক্ষার পদ্ধতি:
মহাকুম্ভে নাগা সাধুদের দীক্ষিত হওয়ার পদ্ধতি অত্যন্ত কঠিন ও সংকীর্ণ। ১৭ জানুয়ারি থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং ২০ জানুয়ারি, মৌনি অমবস্যায় এটি শেষ হবে। এই প্রক্রিয়ার শুরুতে সাধুদের প্রথমে আখড়ার ধর্মীয় পতাকার নীচে তপস্যা শুরু করতে হবে। একান্ত এই তপস্যা করতে গিয়ে পূর্ণ ২৪ ঘণ্টা কোনো ধরনের অন্ন বা জল গ্রহণ করা যাবে না। এটি এক কঠোর নিয়ম, যা সাধুদের ভক্তি ও সাধনার প্রতি আনুগত্যকে প্রদর্শন করে।
এই ২৪ ঘণ্টার তপস্যা শেষে, সাধুরা গঙ্গায় ১০৮ বার ডুব দেবেন, যা তাদের আত্মিক শুদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১০৮ বার গঙ্গায় স্নান করার পর, সাধুরা তাদের ক্ষৌর কর্ম সম্পন্ন করবেন এবং বিজয় হবন (যজ্ঞ) করবেন। এই সময় আখড়ার পাঁচজন গুরু তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় উপকরণ দেবেন, যা সাধনার অংশ। আখড়ার আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর সন্ন্যাসে দীক্ষা প্রদান করবেন, এবং এর পরে ফের হবন বা যজ্ঞের আয়োজন হবে।
নাগা রূপে রূপান্তরিত হওয়া:
১৯ জানুয়ারি সকালে, সাধুরা তাদের কটিবস্ত্র খুলে নাগা সন্ন্যাসী রূপে রূপান্তরিত হবেন। নাগা সন্ন্যাসীরা সাধারণত কোনো পোশাক পরিধান করেন না এবং তাদের দিগম্বর আকারে থাকতে হয়। তবে, যারা পোশাক পরিধান করেন, তারা শুধু নাগা রূপে স্নান করবেন। এই পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া সাধনার শেষ সোপান হিসেবে গণ্য করা হয়, যা নাগা সাধুদের আধ্যাত্মিক মুক্তির পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
অন্ন ও জল গ্রহণের নিষেধ:
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সাধুদের এই বিশেষ তপস্যা ও গঙ্গা স্নানে অন্ন বা জল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ থাকে। এটি তাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিকে একত্রিত করার একটি প্রক্রিয়া, যেখানে তারা পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করে থাকেন। এর মাধ্যমে তাদের মন ও শরীর শুদ্ধ হয় এবং তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেন।
এই মহাকুম্ভে নাগা সাধুদের দীক্ষিত হওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্ত একেবারেই ব্যতিক্রমী এবং ভক্তদের মধ্যে এক আলাদা ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই প্রক্রিয়াটি কুম্ভ মেলার শুদ্ধতা ও ধর্মীয় গুরুত্বকে আরও দৃঢ় করেছে, যা আগামীদিনে সারা পৃথিবীজুড়ে পূণ্যার্থীদের কাছে এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।