চেন্নাই: মাদ্রাস হাইকোর্ট একটি যুগান্তকারী রায়ে অযোধ্যার রাম মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সময় এলইডি স্ক্রিনে তা প্রদর্শন করা ভক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি এন. সতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেখা কোনো “অবৈধ সমাবেশ” নয় এবং এই ধরনের মামলা চালিয়ে যাওয়া আইনের “অপব্যবহার”।
এই রায় শুধু ভক্তদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সমর্থন করেনি, বরং পুলিশের অতি-তৎপরতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। এই ঘটনা ভারতের সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় অধিকারের প্রতি আদালতের প্রতিশ্রুতিকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, যখন অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান সারা দেশে উৎসবের মেজাজে পালিত হয়।
জাতীয় সড়কে লাক্সারি বাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, প্রাণ গেল ১৯ যাত্রীর!
তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি জেলার একটি গ্রামে কয়েকজন ভক্ত একটি এলইডি স্ক্রিন স্থাপন করে এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে, অভিযোগ করে যে এটি “অনুমোদনবিহীন সমাবেশ” এবং জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি। পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ১৪৩ ধারা (অবৈধ সমাবেশ) এবং অন্যান্য ধারায় মামলা রুজু করে। এই ঘটনায় ভক্তরা মাদ্রাস হাইকোর্টে আবেদন করেন, দাবি করে যে তাদের ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
বিচারপতি সতীশ কুমার শুনানির সময় তীব্র ভাষায় পুলিশের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেখার জন্য একটি স্ক্রিন বসানো কীভাবে অবৈধ সমাবেশ হতে পারে? এটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস পালনের অধিকারের অংশ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারতীয় সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং এই ধরনের কার্যকলাপে পুলিশের হস্তক্ষেপ সেই অধিকারের লঙ্ঘন।
বিচারপতি স্পষ্ট করে বলেন, “এই ধরনের মামলা চালিয়ে যাওয়া আইনের অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি শুধু সময় ও সম্পদের অপচয়।” এই রায়ের মাধ্যমে আদালত এফআইআর খারিজ করে দেয় এবং ভক্তদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়।এই রায়ের তাৎপর্য অনেক দূরবিস্তৃত। ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা একটি স্পর্শকাতর বিষয়, এবং প্রায়ই ধর্মীয় কার্যকলাপের নামে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা বিতর্কের জন্ম দেয়।
বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে, যেখানে রাজনৈতিক এবং সামাজিক গতিশীলতা জটিল, এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই সংবাদের শিরোনামে আসে। অযোধ্যা রাম মন্দির উদ্বোধন ছিল জাতীয় গর্বের একটি মুহূর্ত, এবং সারা দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি উদযাপন করেছিল। তিরুনেলভেলির ভক্তরা শুধু এই আনন্দে শরিক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশের পদক্ষেপ তাদের ধর্মীয় অধিকারের উপর আঘাত হিসেবে দেখা হয়েছিল।
এই রায়ের পর স্থানীয় ভক্ত এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলো আদালতের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তিরুনেলভেলির একজন ভক্ত, রামেশ্বরম পান্ডিয়ান, বলেন, “আমরা কোনো অপরাধ করিনি। আমরা শুধু আমাদের ভগবানের অনুষ্ঠান দেখতে চেয়েছিলাম।
পুলিশ আমাদের হয়রানি করেছে, কিন্তু আদালত আমাদের ন্যায় দিয়েছে।” বিজেপির রাজ্য নেতা এইচ. রাজা এই রায়কে “ধর্মীয় স্বাধীনতার জয়” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই রায় প্রমাণ করে যে ভারতের বিচারব্যবস্থা এখনও সংবিধানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”


