৭৫ পরিবারের গ্রামে জন্মেছেন ৫০ জন সিভিল সার্ভেন্ট অফিসার

ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে সর্বোচ্চ সাফল্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় IAS, IPS বা IRS কেরিয়ারকে। এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানেই অদম্য অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম ও…

Madhopatti: How a Tiny UP Village with 75 Families Produced Over 50 IAS, IPS, and IRS Officers

ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে সর্বোচ্চ সাফল্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় IAS, IPS বা IRS কেরিয়ারকে। এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানেই অদম্য অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম ও অসীম মানসিক শক্তির প্রমাণ। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের জোনপুর জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম, মদহোপট্টি (Madhopatti), যেন এই সাফল্যের এক অনন্য কারখানা। মাত্র ৭৫টি পরিবারের গ্রাম থেকে জন্ম নিয়েছে ৫০-এরও বেশি সিভিল সার্ভেন্ট, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন IAS, IPS, IFS, IRS এবং PCS অফিসার। ফলে দেশজুড়ে গ্রামটির নাম হয়েছে “IAS ভিলেজ অব ইন্ডিয়া”।

ইতিহাসের শেকড় ও শিক্ষার বীজ
মদহোপট্টির এই সাফল্যের বীজ রোপিত হয়েছিল প্রায় এক শতাব্দী আগে। ১৯১৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঠাকুর ভাগবতীদীন সিংহ এবং তাঁর স্ত্রী শ্যামরতি সিংহ নিজেদের বাড়িতে একটি ছোট্ট শিক্ষার কেন্দ্র চালু করেন। প্রথমে মেয়েদের জন্য, পরে ছেলেদের জন্য পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় এক শিক্ষা বিপ্লব, যা গ্রামটিকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।

   

Also Read | গত সাত দিনে ভারত থেকে রেকর্ড পরিমান চাল নিয়েছে ইউনুস সরকার

১৯৫২ সালে গ্রামের প্রথম IFS অফিসার হিসেবে উঠে আসেন ইন্দু প্রকাশ সিংহ। তিন বছর পর, ১৯৫৫ সালে, বিনয় কুমার সিংহ IAS পদে যোগ দিয়ে ইতিহাস গড়েন। তিনি পরে বিহারের চিফ সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেন। এখান থেকেই সাফল্যের ধারা যেন আরও জোরালো হতে থাকে।

পরিবারের ভিতরে সাফল্যের পরম্পরা
এই গ্রামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল পরিবারের ভিতরেই শিক্ষার ধারাবাহিকতা। একই পরিবারের চার ভাই—বিনয় কুমার সিংহ, চতুর পাল সিংহ, অজয় কুমার সিংহ এবং শশিকান্ত সিংহ—একসঙ্গে IAS ও IPS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এটি শুধু পরিবারের গৌরবই নয়, গোটা গ্রামকে এক অভূতপূর্ব আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল।

এখানে সাফল্য শুধু পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যেসব কনে এই গ্রামে বিয়ে করে এসেছেন, তাঁদেরও উৎসাহ দেওয়া হয় পড়াশোনার জন্য। কেউ কেউ পরবর্তীতে সিভিল সার্ভিসেও সাফল্য পান। ফলে গ্রামটি যেন নিজে থেকেই এক লাইভ কোচিং সেন্টার, যেখানে প্রবীণ অফিসাররা নবীন প্রজন্মকে দিশা দেখান।

বিস্তৃত কর্মক্ষেত্র
শুধু প্রশাসন নয়, মদহোপট্টির মানুষরা দেশের নানা ক্ষেত্রে কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন। কেউ যোগ দিয়েছেন আইএসআরও-তে, কেউ ভাভা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার-এ, কেউ আবার বিশ্বব্যাংক বা বিচার বিভাগে। এই বহুমুখী সাফল্য প্রমাণ করে যে গ্রামটির শিক্ষার সংস্কৃতি কেবল UPSC বা PCS পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং জ্ঞানকে নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর মানসিকতা এখানে দৃঢ়ভাবে উপস্থিত।

Advertisements

গ্রামজীবন ও শিক্ষার চর্চা
প্রায় ৪০০০ মানুষের এই গ্রাম মূলত রাজপুত জনজাতির। জীবিকা নির্ভর করে কৃষির উপর। গম, মসুর, সরিষা, আলু, আখ—এগুলোই প্রধান ফসল। তবে কৃষির সঙ্গে শিক্ষার মেলবন্ধন এখানে সবচেয়ে বড় সম্পদ।

গ্রামে রয়েছে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি জুনিয়র হাইস্কুল এবং দুটি ইন্টার কলেজ। শিক্ষার এই বিস্তারই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখার শক্তি জুগিয়েছে। আরও উল্লেখযোগ্য হল—গ্রামে সাফল্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছে একেবারেই সমষ্টিগত মানসিকতা দিয়ে। একজন পরীক্ষায় সফল হলে গোটা গ্রাম আনন্দে মেতে ওঠে, আর কেউ ব্যর্থ হলে তাকে উৎসাহ দিয়ে আবার প্রস্তুত করে।

সাফল্যের মূল রহস্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, মদহোপট্টির এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে রয়েছে তিনটি প্রধান কারণ—
১. সমষ্টিগত অনুপ্রেরণা: গ্রামজুড়ে প্রতিটি পরিবার শিক্ষার প্রতি একেবারে নিবেদিত।
২. পরিবারের ঐতিহ্য: পূর্ববর্তী প্রজন্মের অফিসাররা নবীনদের গাইড করেন।
৩. শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকার: মেয়েরা ও গৃহবধূদেরও পড়াশোনায় উৎসাহ দেওয়া হয়।

মদহোপট্টি নিছক একটি গ্রাম নয়, এটি ভারতের কাছে শিক্ষার শক্তি ও সমষ্টিগত প্রেরণার এক অনন্য প্রতীক। মাত্র ৭৫ পরিবারের গ্রাম যদি ৫০ জন সিভিল সার্ভেন্ট তৈরি করতে পারে, তবে তা প্রমাণ করে—সঠিক দিশা, কঠোর পরিশ্রম এবং একে অপরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকলে যে কোনও স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। আজ মদহোপট্টি শুধু জৌনপুরের নয়, গোটা ভারতের গর্ব।

For more updates, follow Kolkata24x7 on FacebookTwitter, InstagramYoutube; join our community on Whatsapp