পাঁচবার শমন পাঠাবার পরে অবশেষে লখনউ কোর্টে আত্মসমর্পণ করলেন রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। আর সঙ্গে সঙ্গে পেলেন জামিনও লখনউয়ের একটি বিশেষ এমপি-এমএলএ আদালত আজ লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তিমূলক মন্তব্যের জন্য দায়ের করা একটি মানহানির মামলায় জামিন মঞ্জুর করেছে।
পাঁচটি সমন এড়িয়ে যাওয়ার পর, রাহুল গান্ধী অবশেষে লখনউয়ের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আলোক ভার্মার সামনে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিনের জন্য আবেদন করেন। আদালত তাঁকে দুটি ২০,০০০ টাকার বন্ড এবং সমপরিমাণ দুটি জামিনদারের শর্তে জামিন মঞ্জুর করে।
এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ, যেখানে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “সেনাবাহিনীর অপমানের জন্য মাত্র ২০,০০০ টাকার জামিন কি যথেষ্ট?”
মামলার প্রেক্ষাপট
মামলাটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার সময় করা মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে দায়ের করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২, রাজস্থানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, “আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম যে সংবাদমাধ্যম আমাকে চীন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না।
তারা ২,০০০ বর্গ কিলোমিটার ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করা, আমাদের সৈন্যদের হত্যা করা এবং অরুণাচল প্রদেশে আমাদের সৈন্যদের উপর হামলা করা একটি দেশ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না। আমি ঠিক ছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “লোকেরা ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন করবে, কিন্তু চীনা সৈন্যদের দ্বারা ভারতীয় সৈন্যদের ‘প্রহার’ সম্পর্কে একটি প্রশ্নও করবে না।”
এই মন্তব্যকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও মনোবলের উপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও)-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর উদয় শঙ্কর শ্রীবাস্তব মানহানির অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি দাবি করেন, রাহুলের মন্তব্য তাঁর এবং সেনাবাহিনীর প্রতি অপমানজনক ছিল।
আইনি প্রক্রিয়া
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, লখনউয়ের এমপি-এমএলএ আদালত রাহুল গান্ধীকে মানহানির অভিযোগে সমন জারি করে এবং ২৪ মার্চ হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। রাহুল এই সমন এবং মানহানির মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেন।
তবে, মে মাসে হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়, বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থী বলেন, “ভারতীয় সংবিধানের ১৯(১)(এ) ধারা বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়, কিন্তু এই স্বাধীনতা যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধের অধীন এবং এটি কোনো ব্যক্তি বা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করার স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত করে না।”
এরপর, পাঁচটি শুনানিতে অনুপস্থিত থাকার পর, রাহুল গান্ধী ১৫ জুলাই লখনউ কোর্টে হাজির হন। তাঁর আইনজীবী প্রাংশু আগরওয়াল যুক্তি দেন যে রাহুল নির্দোষ এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। অন্যদিকে, অভিযোগকারীর আইনজীবী দাবি করেন যে রাহুলের মন্তব্য সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও মনোবলের উপর আঘাত করেছে।
আদালতের সিদ্ধান্ত
অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আলোক ভার্মার আদালত রাহুল গান্ধীকে দুটি ২০,০০০ টাকার বন্ড এবং সমপরিমাণ দুটি জামিনদারের শর্তে জামিন মঞ্জুর করে। রাহুল লখনউয়ের চৌধুরী চরণ সিং আমাউসি বিমানবন্দরে দুপুর ১:০০ টায় চার্টার্ড প্লেনে পৌঁছান এবং সেখান থেকে সরাসরি সিভিল কোর্টে যান। আদালতের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর, তিনি কংগ্রেসের রাজ্য ইউনিটের সভাপতি অজয় রায় এবং ইনচার্জ অবিনাশ পাণ্ডের সঙ্গে কোর্টে উপস্থিত ছিলেন।
২১ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ: বিধানসভা ভোটের আগে ধর্মতলায় নজরকাড়া প্রস্তুতি তৃণমূলের
আইনি ও রাজনৈতিক প্রভাব
এই মামলা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মানহানির মামলার মধ্যে একটি। ২০২৩ সালে, তিনি ‘মোদী ’ উপাধি নিয়ে মন্তব্যের জন্য গুজরাটের সুরাটে দুই বছরের কারাদণ্ড পেয়েছিলেন, যা পরে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছিল।
এই ঘটনাগুলি কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলাগুলি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের উপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল হতে পারে।
রাহুল গান্ধীর জামিন মঞ্জুর হলেও, এই মামলা ভারতীয় রাজনীতিতে বাক স্বাধীনতা এবং মানহানির মধ্যে সীমারেখা নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আগামী দিনে এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।