পুলিশ ঘুষ নিচ্ছে! গেরুয়া রাজ্যে তুলকালাম বিধায়কের

lucknow-bjp-mla-yogesh-shukla-bribery-allegations-police-station-probe

লখনউ: উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মহিগাঁও থানাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ থানায় কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঘুষ দাবি করছিল, পাশাপাশি ভয় দেখিয়ে হয়রানি চালাচ্ছিল। আর এই অভিযোগ সামনে এনেছেন অন্য কেউ নন, বরং ক্ষমতাসীন বিজেপির বিধায়ক যোগেশ শুক্লা স্বয়ং। ফলে প্রশাসনিক মহলের মধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

Advertisements

বিধায়ক যোগেশ শুক্লা জানিয়েছেন, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র বাক্সী কা তালাব থেকে দুই জন ক্ষুব্ধ বাসিন্দা সরাসরি তাঁর কাছে এসে অভিযোগ জানান। তাঁদের মধ্যে একজনের মোবাইল ফোন চুরি হয়েছিল, যা পুলিশ উদ্ধার করলেও ফেরত দেওয়া হয়নি বরং একটি কনস্টেবল নাকি ২,০০০ টাকা ঘুষ দাবি করেছে। অন্য বাসিন্দা অভিযোগ করেন তাঁর মোটরবাইক সম্পূর্ণ বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও ভুলভাবে সিজ করা হয়েছে।

   

অ্যাশেজে ১২৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস লিখলেন এই অজি তারকা

৬৫ বছর বয়সী বিধায়ক শুক্লা প্রথমে ফোনে থানায় যোগাযোগ করে বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হলেও অভিযোগের সমাধান হয়নি। এরপর তিনি বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগতভাবে থানায় যান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলেন।

“পুলিশের ভুল-ত্রুটি হলে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অথচ এখানে পুলিশ উলটো সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। এটা বরদাস্ত করা যায় না,” সাংবাদিকদের বলেন বিধায়ক শুক্লা। অপপ্রচার রোধে তিনি এটাও স্পষ্ট করেন যে থানা চত্বরে কোনও ‘ধর্না’ হয়নি তিনি কেবল দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন।

বিষয়টি সামনে আসতেই জেলা পুলিশ প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। মহিগাঁও থানায় কর্মরত অভিযুক্ত দুই জন একজন সাব-ইনস্পেক্টর এবং একজন কনস্টেবল তাৎক্ষণিকভাবে বর্তমান দায়িত্ব থেকে অপসারিত হয়ে রিজার্ভ লাইনে সংযুক্ত হয়েছেন। লখনউর অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ সুপার (আইপিএস) অমোল মুরকুট জানিয়েছেন, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে এবং বাক্সী কা তালাবের সহকারী পুলিশ কমিশনার জ্ঞানেন্দ্র সিংকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Advertisements

বিধায়ক শুক্লা দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে ভারতীয় যুব মোর্চার সংগঠনিক দায়িত্ব দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার পরে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমবার লড়েই বিজেপি টিকিটে বিজয়ী হয়ে বাক্সী কা তালাব কেন্দ্রের বিধায়ক হন। তাই তাঁর অভিযোগ প্রশাসনে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও জানান প্রথম অভিযোগকারী মোবাইল ফোন উদ্ধার হওয়ার খবর পাওয়ার পরে থানায় যান, কিন্তু কনস্টেবল টাকা দাবি করেন। তারপর যখন তিনি আবার থানায় যান, তখন তাঁকে উল্টো হুমকি দেওয়া হয় এবং বলা হয় কোনও ফোন উদ্ধারই হয়নি।

দ্বিতীয় অভিযোগটি আরো বিস্তৃত। একজন যুবকের মোটরবাইক সম্পূর্ণ বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও ভুল চ্যালান দিয়ে সিজ করা হয়। পরে পুলিশ নিজেই স্বীকার করে যে চ্যালানটি ভুলভাবে দেওয়া হয়েছে তবুও সাত দিন ধরে রিপোর্ট আদালতে পাঠানো হয়নি, ফলে মোটরবাইক মালিক থানার সঙ্গে আদালতের মধ্যে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত।

বিধায়ক শুক্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন “যদি পুলিশ লক্ষ্য পূরণের জন্য নির্বিচারে চ্যালান করে, মানুষকে হয়রানি করে, তাহলে এটা অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপার। এমন অনৈতিক প্রথা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।” স্থানীয় মানুষের অভিযোগ প্রকাশ্যে উঠে আসায় প্রশাসনিকভাবে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।