লোকসভায় শনিবার দুপুরে বন্দে মাতরমকে কেন্দ্র করে শুরু হল সর্বদলীয় আলোচনা। অধিবেশন শুরু হতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বন্দে মাতরমের ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য ও সাংস্কৃতিক শক্তির কথা তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্য—“এই গানই আমাদের শক্তির মন্ত্র হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তপ্ত সময়ে গোটা দেশের অনুপ্রেরণা ছিল বন্দে মাতরম।”
‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধনে তৃণমূলের আপত্তি
বক্তৃতার মাঝে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ বলে উল্লেখ করতেই আপত্তি তোলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়। সৌগতের বক্তব্য—“অন্তত বাবু বলুন।” মন্তব্য শুনেই নিজের বক্তব্য সংশোধন করেন মোদী। বলেন—“আচ্ছা, বঙ্কিমবাবু বলছি।” সঙ্গে সৌগতকে ‘দাদা’ সম্বোধন করে ধন্যবাদও জানান তিনি। খানিক রসিকতার সুরে যোগ করেন, “আপনাকেও তো দাদা বলেই ডাকি।”
বন্দে মাতরম নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মোদী Lok Sabha debate on Bande Mataram
তারপরই বন্দে মাতরমের মাহাত্ম্য পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারের আগ্রহের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন—“বহু প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এই গান। ভবিষ্যতেও জাতিকে পথ দেখাবে।”
এখানেই মোদী অভিযোগ তোলেন—১৯৩৭ সালে কংগ্রেস বন্দে মাতরমের গুরুত্বপূর্ণ স্তবক বাদ দিয়েছিল, যা “দেশভাগের বীজ বপনে ভূমিকা রাখে” বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর কথায়—“গানটির প্রাণবিন্দুই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজকের প্রজন্মের জানা উচিত কেন এই মহামন্ত্রের প্রতি সেই অবিচার করা হয়েছিল। বিভাজনমূলক মানসিকতাই আজও দেশের সামনে চ্যালেঞ্জ।”
কংগ্রেসের তীব্র পাল্টা, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা’
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেস মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলে। দলের তরফে বলা হয়, “যাঁরা সংবিধান, গান্ধীজিকে আক্রমণ করে, কুশপুতুল পোড়ায়—তারাই স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় জানান, “১৯৮৬ থেকে আজ পর্যন্ত, কংগ্রেসের প্রতিটি বৈঠক বন্দে মাতরম গেয়ে শুরু হয়। এই গান আমাদের একতার প্রতীক, দেশমাতৃকার গান। মোদীজিই ইতিহাসকে রাজনৈতিক রঙ দিতে চাইছেন।”
সামনে আরও উত্তপ্ত আলোচনা
বন্দে মাতরমের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে শাসক ও বিরোধী শিবিরের সাংসদেরা আজ লোকসভায় বক্তব্য রাখবেন। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা, স্বাধীনতা সংগ্রামের মতাদর্শ এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধ—সব মিলিয়ে আলোচনার আবহ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে সংসদে।
