“স্ত্রীর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেন?” এলঅ্যান্ডটি কর্তার মন্তব্যে অভিমানী স্ত্রী

কর্পোরেট দুনিয়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও তা যেন চোখে পড়ে না কর্তা ব্যাক্তিদের। আরও আরও বেশি চাই এই দুনিয়াতে (lnt executive)। অফিস যেন মনে হয় ছোট…

lnt executive controversial remark

কর্পোরেট দুনিয়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও তা যেন চোখে পড়ে না কর্তা ব্যাক্তিদের। আরও আরও বেশি চাই এই দুনিয়াতে (lnt executive)। অফিস যেন মনে হয় ছোট গল্প ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।’ এলঅ্যান্ডটি কর্তা সুব্রহ্মণ্যন ঠিক এমন ই একজন হোমরা চোমরা, যিনি কোম্পানিতে কাজের সময় বাড়িয়ে দিতে চান। নির্ধারিত কাজ শেষ হয়ে গেলেও আরও চাপ দিয়ে বসিয়ে রাখতে চান বাড়িতে।

তার বক্তব্য “বাড়িতে বসে কী করেন, স্ত্রীর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেন?” তার চেয়ে অফিসে থাকুন কমবে চাপ। কাজের মধ্যে থাকুন মন ভালো থাকবে। কিন্তু তার এই বক্তব্যে চটেছেন তার নিজের স্ত্রী। রীতিমত অভিমান করেছেন তিনি। সুব্রহ্মণ্যন পরে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই মন্তব্য তিনি একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে হালকা মেজাজে করেছিলেন।

   

এই বক্তব্য কোম্পানির নীতি হিসেবে প্রকাশ করার উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি জানান, তাঁর এই অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তার ধরন কখনও কখনও অপ্রত্যাশিত ফলাফলের দিকে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, “এটি একটি অভ্যন্তরীণ মন্তব্য ছিল, যা প্রকল্পের সময়সীমার চাপের প্রেক্ষিতে করা হয়েছিল। কেউ নীতিভঙ্গ করে এটি রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।”

তিনি তাঁর স্ত্রী মীনা সুব্রহ্মণ্যনের উল্লেখ নিয়ে বলেন, “তিনি পেশাগত আলোচনায় অপ্রয়োজনীয়ভাবে উল্লেখিত হওয়ায় বিরক্ত হয়েছিলেন। আমরা দুজনেই এই ঘটনায় অস্বস্তি বোধ করেছি।” এই ঘটনা জানুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশ্যে আসে, যখন এই অভ্যন্তরীণ বৈঠকের একটি ভিডিও রেডিটে ভাইরাল হয়। এই মন্তব্যের জন্য সুব্রহ্মণ্যনের তীব্র সমালোচনা হয়, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

অনেকে তাঁর মন্তব্যকে নারীবিদ্বেষী এবং কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অসংবেদনশীল বলে অভিযোগ করেন। বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন ইনস্টাগ্রামে লেখেন, “এত উচ্চপদস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে এমন মন্তব্য শুনে হতবাক। মানসিক স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ।” ব্যাডমিন্টন তারকা গুট্টা জওয়ালা এক্স-এ লেখেন, “এই মন্তব্য হতাশাজনক এবং ভীতিকর।

মানসিক স্বাস্থ্য ও বিশ্রামের প্রতি এত অবজ্ঞা অগ্রহণযোগ্য।” এলঅ্যান্ডটি-র পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, সুব্রহ্মণ্যনের মন্তব্য জাতীয় উন্নয়নের বৃহত্তর লক্ষ্যের প্রেক্ষিতে করা হয়েছিল। বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা বিশ্বাস করি, এটি ভারতের দশক। অসাধারণ ফলাফলের জন্য অসাধারণ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।” তবে, এই বিবৃতি বিতর্ক কমাতে ব্যর্থ হয়।

Advertisements

সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কর্মীরা কতক্ষণ স্ক্রিন বা ম্যানেজারদের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে?” আরেকজন লিখেছেন, “এলঅ্যান্ডটি নতুনদের কম বেতনে নিয়োগ করে, সপ্তাহে ৬.৫ দিন কাজ করায় এবং বছরে মাত্র সাত দিনের ছুটি দেয়। ৯০% কর্মী তিন বছরের মধ্যে চলে যায়।” এই ঘটনা ভারতের কর্পোরেট সংস্কৃতি এবং কর্মজীবন-ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য নিয়ে বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিয়েছে।

এর আগে ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির ৭০ ঘণ্টার কাজের সপ্তাহের প্রস্তাবও বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। সুব্রহ্মণ্যনের মন্তব্যের পর সিপিআইএমএল (লিবারেশন) সাংসদ রাজা রাম সিং কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়ার কাছে চিঠি লিখে ৪৮ ঘণ্টার সপ্তাহের বেশি কাজ করতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের শ্রমিকরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ দশটি অর্থনীতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় কাজ করে। সুব্রহ্মণ্যন পরে মানিকন্ট্রোলকে বলেন, “আমি চাপের মধ্যে এই মন্তব্য করেছিলাম। প্রকল্পে বিলম্বের কারণে ক্লায়েন্টদের অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছিল।

কেন্দ্রের GST প্রস্তাবে সমর্থন জানাল GoM, আসছে দুই স্ল্যাব ব্যবস্থা

আমার উত্তর ভিন্নভাবে দেওয়া উচিত ছিল।” তিনি স্বীকার করেন, তাঁর স্ত্রীও এই ঘটনায় বিরক্ত হয়েছেন। এই ঘটনা ভারতের কর্পোরেট জগতে মানসিক স্বাস্থ্য, কর্মজীবনের ভারসাম্য এবং নারীদের প্রতি সংবেদনশীলতার প্রশ্ন তুলেছে।