ভোপাল: দীপাবলির (Diwali) উৎসবে যখন চারদিকে আলোর রোশনাই, তখন অনিশয়তার অন্ধকার গ্রাস করেছে ভোপালের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মানস ভবনের কাছের এক পুরনো বস্তিতে। বর্তমানে ঝাঁ চকচকে ওই অঞ্চল ছিল জলাভূমি। প্রায় ২৭ টি আদিবাসী পরিবারকে (Tribal Families) বিষধর সাপে ভরা জলা-জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় থাকতে দেওয়া হয়।
তাঁরা ধীরে ধীরে সেই জঙ্গল পরিষ্কার করে, জলা বুজিয়ে একটু একটু করে ছোট ছোট ঘর তৈরি করেন। গড়ে তোলেন নিজেদের বস্তি। মূলত দিনমজুরের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন ২৭ টি পরিবারের প্রায় ২০০ জন মানুষ। এইভাবে কেটে গিয়েছে ৭০ টি বছর। এলাকা উন্নত হয়েছে। ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট হয়েছে।
এখন শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এককালের ওই জলা জঙ্গল বোজানো বস্তি শহরের সৌন্দর্যায়নের সঙ্গে বড়ই বেমামান। তাই তাঁদের ঘর ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দীপাবলিতে পুরো শহর সেজে উঠলেও প্রদীপ জ্বলেনি এই বস্তিতে। কারণ উৎসবের মরশুম শুরুর ঠিক আগে ২৫ আগস্ট তাঁদের নোটিশ দিয়ে বলা হয়, সরকারি জায়গা এবং বনভূমি ৭ দিনের মধ্যে খালি করে দিতে হবে।
সমাজকর্মী ও স্থানীয়দের আপত্তি
কিন্তু এই ঘটনায় বস্তিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় এবং সমাজকর্মীরা। এই পদক্ষেপকে অন্যায্য, এমনকি নিষ্ঠুর বলে অভিহিত করেছেন তাঁরা। এই পরিবারগুলির অনেকেই তিন প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করছেন। বন অধিকার আইন অনুযায়ী, পুনর্বাসন ছাড়া বস্তিবাসীদের আইনত উচ্ছেদ করা যাবে না, বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
কল্পনা সিং ভাখালা নামক এক বাসিন্দা বলেন, “প্রতি বছর আমরা প্রদীপ জ্বালাই, এই বছর আমরা প্রতিবাদের মোমবাতি জ্বেলেছি। আমাদের নতুন ঘর চাই না, আমরা ন্যায়বিচার চাই।” বস্তির আরও এক বাসিন্দা কর্মা বাই বলেন, “এই রাস্তাগুলো আগে দীপাবলির সময় গাঁদা ফুলের মালা, আলোতে সেজে উঠত, শিশুদের হাসিতে ঝলমল করত। আজ আমাদের বাড়িগুলোর দেওয়াল পোস্টারে ঢাকা” “আমাদের দীপাবলিতে অন্ধকার কেন? আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হবে, আমাদের স্বপ্ন ভেঙে ফেলা হবে?”
মহকুমা শাসক দীপক পান্ডে বলেন, “সরকারি এই জমি বস্তিবাসীরা দখল করে রেখেছেন। দীপাবলির কথা মাথায় রেখেই ওনাদের এখনও স্থানান্তর করা হয়নি। পুরসভা তাঁদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় নির্মিত আবাসনে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে”।