ফের জম্মু-কাশ্মীরে মদ বিক্রির নিষেধাজ্ঞা! পর্যটকরা ধরা পড়লেই…

জম্মু-কাশ্মীর, (Jammu-Kashmir) যাকে “ভূস্বর্গ” বলা হয়, সেখানকার অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সবসময়ই পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে। তবে, বর্তমানে সেখানে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে,…

Liquor Ban in Jammu and Kashmir? PDP, NC's Demand Ignites Controversy

জম্মু-কাশ্মীর, (Jammu-Kashmir) যাকে “ভূস্বর্গ” বলা হয়, সেখানকার অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সবসময়ই পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে। তবে, বর্তমানে সেখানে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা হলো মদ নিষিদ্ধ করার দাবি। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের (Jammu-Kashmir) রাজনৈতিক পরিবেশে মদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি শোনা যাচ্ছে, যা মূলত স্থানীয় রাজনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয়েছে।

২০১৬ সালে প্রথম এই দাবিটি উঠে ছিল, তবে সে সময় মহবুবা মুফতির নেতৃত্বাধীন পিডিপি (পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি) আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি একেবারে বদলে গেছে। মেহবুবা মুফতি এখন মদ নিষিদ্ধ করার পক্ষ নিয়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছেন। তার দল পিডিপি ও জম্মু-কাশ্মীরের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যেমন ন্যাশনাল কনফারেন্স, একযোগে এই দাবি সামনে এনেছে।

   

সম্প্রতি শ্রীনগরসহ (Jammu-Kashmir) অন্যান্য অঞ্চলে মদ নিষিদ্ধ করার দাবিতে পোস্টারও দেখা যাচ্ছে। এসব পোস্টারে পর্যটকদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যেন তারা স্থানীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সম্মান করেন এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকেন। পুলিশ যখন এসব পোস্টার সরাতে যায়, তখন বিরোধী দলগুলো এর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে। তাঁদের মতে, এটি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মানুষের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।

Advertisements

জম্মু-কাশ্মীরের মদ নিষিদ্ধকরণের দাবিটি শুধু রাজনৈতিক স্তরে নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তরেও নানা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ শাসনামলে জম্মু-কাশ্মীরে মদের দোকান ছিল এবং সেখানে মদ বিক্রির ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলির প্রভাব এবং রাজ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধির কারণে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এখন, জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিবর্তিত হওয়ায়, এই মদ নিষিদ্ধ করার দাবি আবারও সামনে এসেছে।

মদ নিষিদ্ধকরণের পক্ষে যারা মত দিয়েছেন, তারা যুক্তি দিয়েছেন যে, এটি একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক চাহিদা। জম্মু-কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যে মদ্যপান একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং তাদের বিশ্বাসে এটি ধর্মীয়ভাবে অনুচিত। কিছু মানুষ মনে করেন যে, মদ নিষিদ্ধ করলে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে এবং যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির প্রবণতা কমানো যাবে।

অন্যদিকে, এর বিপরীতে কিছু পর্যটন বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই নিষেধাজ্ঞা রাজ্যের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জম্মু-কাশ্মীর একটি অন্যতম পর্যটন গন্তব্য, যেখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আসেন। পর্যটকরা স্থানীয় ঐতিহ্য সম্মান করতে চাইলেও, অনেক সময় মদ্যপান একটি সাধারিত অভ্যেস হিসেবে চলে আসে। তাই মদ নিষিদ্ধ করা হলে, তাদের অভ্যস্ত জীবনে পরিবর্তন আসবে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের আসা বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

এছাড়া, রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মদ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে মতবিরোধও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে যেখানে একাধিক রাজনৈতিক দল এর পক্ষে, অন্যদিকে কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ হতে পারে।

তবে, আগামী বাজেট অধিবেশনে এই বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত আসা সম্ভব। পিডিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্স দুটি দলই মদ নিষিদ্ধ করার বিল জমা দিয়েছে এবং এটি রাজনৈতিক আঙিনায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হতে পারে।

মোট কথা, জম্মু-কাশ্মীরে মদ নিষিদ্ধ করার দাবিটি একটি জটিল এবং বিতর্কিত প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর সম্ভাব্য ফলাফল কী হবে, তা সময়ই বলতে পারবে।