বিহারের পুরনিয়া রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন চমক সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, তখনকার জেডিইউ এমপি সান্তোষ কুশওয়াহা এক জনমুখী বক্তব্যে বলেছিলেন, “তার কারণে অনেক নারী সিঁন্দুর হারিয়েছেন… পুরনিয়া কখনোই পাপ্পু যাদবের মতো কাউকে নির্বাচিত করবে না।” কিন্তু ফলাফল পুরোপুরি আলাদা চিত্র দেখিয়েছিল। পাপ্পু যাদব, যিনি স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, জেডিইউর দুইবারের এমপি সন্তোষকে হারিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইতিহাস গড়েছিলেন।
এক বছর পর, ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি রিল ভাইরাল হলো। রিলে দেখা গেল পাপ্পু যাদব রয়্যাল এনফিল্ড বাইকে চেপে যাচ্ছেন, আর তাঁর পিলিয়নে বসেছেন সেই সান্তোষ কুশওয়াহা। কিন্তু আগের মতো তিনি আর জেডিইউর সদস্য ছিলেন না। এবার তিনি আরজেডির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আর রোড শো বা র্যালি যেন লোকসভা নয়, বরং বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য। রাজনীতির গতিবেগ সত্যিই অপ্রত্যাশিত এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল। এবার প্রশ্ন হলো, কেন পুরনিয়ার দুই এমপি, প্রাক্তন ও বর্তমান, একত্রিত হলেন? উত্তর সহজ — লেশি সিংকে হারানোর জন্য। লেশী সিং, যিনি জেডিইউর গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং নিতীশ কুমারের বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে পুরনিয়া ও সীমাঞ্চলের রাজনৈতিক মানচিত্রে সুপরিচিত, এবার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
২০২৪ সালে লেশি সিং, তখন কুশওয়াহার জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৫ সালে পুরো চিত্রই পাল্টে গিয়েছিল। লেশী সিং এবার সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কুশবাহার বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। নির্বাচন কেন্দ্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচন দেখিয়েছে কিভাবে রাজনৈতিক বিশ্বাস, জোট এবং দলের সমর্থন এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
ফলাফলও ২০২৪ সালের মতোই পুনরাবৃত্তি হলো। কুশওয়াহা আবারও হেরে গেলেন। এই জয়ের মাধ্যমে লেশী সিং প্রমাণ করলেন যে, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা নয়, বরং দলের শক্তি এবং স্ট্রাটেজিক পরিকল্পনাই নির্বাচন জয়ের মূল চাবিকাঠি। এছাড়াও এটি দেখায় যে, রাজনীতিতে ব্যর্থ প্রতিদ্বন্দ্বীদের নতুন জোট বা সমন্বয় সবসময় সাফল্য আনে না।
লেশি সিংয়ের এই জয় শুধুমাত্র পুরনিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে শক্তিশালী করল না, বরং নিতীশ কুমারের নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করল। জেডিইউর ভিতরে এবং বাইরে, উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেল। তিনি সীমাঞ্চল এবং পুরনিয়ার মানুষদের কাছে এক স্থায়ী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন।
রাজনীতিবিদদের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। কখনো কখনো, পুরনিয়ার মতো অঞ্চলে ব্যক্তিগত বিরোধ এবং দলগত পরিবর্তনের চক্রের মধ্যেও নির্বাচনের ফলাফল পূর্বাভাসের বাইরে যেতে পারে না। লেশী সিং সেই প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, রাজনৈতিক দৃঢ়তা, জনমতের সঙ্গে সংযোগ এবং দলীয় সমর্থন একসাথে থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বী যতোই শক্তিশালী হোক, জয় অর্জন সম্ভব।


