ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস (FIP), যারা প্রায় ৫,৫০০ পাইলট এবং বিমান চালনার পেশাদারদের প্রতিনিধিত্ব করেন (Legal Notice), সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট এআই-১৭১ দুর্ঘটনার প্রতিবেদনের জন্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল (WSJ) এবং রয়টার্সের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ জারি করেছে।
এই দুর্ঘটনাটি গত ১২ জুন গুজরাটের আহমেদাবাদে ঘটেছিল, যেখানে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি টেকঅফের কিছুক্ষণ পরেই বিজে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রী এবং ক্রু সদস্য এবং মাটিতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়, যা গত এক দশকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি।
এফআইপি তাদের নোটিশে এই দুই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার বিরুদ্ধে “ভিত্তিহীন”, “অপমানজনক” এবং “অপরীক্ষিত” প্রতিবেদনের অভিযোগ এনেছে, যা তাদের মতে, পাইলটদের খ্যাতি এবং ভারতীয় বিমান চালনা শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।এই দুর্ঘটনার তদন্ত ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, এবং এর প্রাথমিক প্রতিবেদন গত ১২ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, টেকঅফের কয়েক সেকেন্ড পরে বিমানের দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচগুলি “রান” থেকে “কাটঅফ” অবস্থানে চলে যায়, যার ফলে উভয় ইঞ্জিন জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে রেকর্ড করা একটি কথোপকথনে শোনা যায়, একজন পাইলট অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করছেন, “তুমি জ্বালানি বন্ধ করলে কেন?”
এবং অন্যজন উত্তর দিয়েছেন, “আমি তা করিনি।” তবে, প্রতিবেদনে এটি স্পষ্ট করা হয়নি যে কোন পাইলট কী বলেছেন বা সুইচগুলি কেন বা কীভাবে সরানো হয়েছিল। এএআইবি জোর দিয়ে বলেছে যে এটি একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং এটি কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করে না।
এফআইপি-র অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ১৭ জুলাইয়ের একটি প্রতিবেদন, যেখানে বলা হয়েছে যে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের তথ্যের ভিত্তিতে, মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুসারে, ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
রয়টার্সও একই দিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে ডব্লিউএসজে-র প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলা হয় যে ক্যাপ্টেনই জ্বালানি বন্ধ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এফআইপি-র প্রেসিডেন্ট সিএস রণধাওয়া এই প্রতিবেদনগুলিকে “অপমানজনক” এবং “ভিত্তিহীন” বলে সমালোচনা করেছেন, যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে পাইলটদের দ্বারা সুইচ সরানোর কোনও উল্লেখ নেই।
তিনি বলেছেন, “আমরা পাইলটদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু করার বিরোধিতা করছি যখন প্রাথমিক প্রতিবেদনে পাইলটের ভুল বা ক্রিয়াকলাপের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তারা পাইলটদের মানহানি করছে। আমরা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছি এবং আমাদের আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করব।”এফআইপি তাদের নোটিশে রয়টার্স এবং ডব্লিউএসজে-র কাছে একটি সরকারি ক্ষমা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে এবং তাদের প্রতিবেদনগুলি সংশোধন বা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে।
তারা আরও দাবি করেছে যে এই সংবাদ সংস্থাগুলি তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ বা পাইলটদের দায়বদ্ধতার বিষয়ে আর কোনও জল্পনা প্রকাশ না করে। এফআইপি-র মতে, এই ধরনের প্রতিবেদন শুধুমাত্র পাইলটদের পেশাগত খ্যাতি এবং তাদের পরিবারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, বরং ভারতীয় বিমান চালনা শিল্পের নিরাপত্তা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে অযথা উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
এই ঘটনায় ভারতীয় বেসামরিক বিমান চালনা মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য পাইলট সংগঠন, যেমন ইন্ডিয়ান কমার্শিয়াল পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন (আইসিপিএ) এবং এয়ারলাইন পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এএলপিএ-ইন্ডিয়া), তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলটদের দোষারোপ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। তারা বলেছে যে তদন্ত এখনও চলমান এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অযৌক্তিক।
এএআইবি-ও একটি বিবৃতিতে বলেছে যে, “কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বারবার নির্বাচিত এবং অপরীক্ষিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।” এটি জনসাধারণ এবং সংবাদমাধ্যমকে তদন্তের অগ্রগতির জন্য অপেক্ষা করতে এবং অপ্রমাণিত তথ্যের ভিত্তিতে জল্পনা এড়াতে আহ্বান জানিয়েছে।
এই বিতর্কটি ভারতীয় বিমান চালনা শিল্পের জন্য একটি সংবেদনশীল সময়ে ঘটছে, যখন এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার পরে তাদের বোয়িং ৭৮৭ ফ্লিটের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচগুলির নিরাপত্তা পরীক্ষা করছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে তাদের পরিদর্শনে কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি।
তবে, ২০১৮ সালে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) একটি পরামর্শ জারি করেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে কিছু বোয়িং বিমানের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচগুলির লকিং মেকানিজম নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে।
ডায়মন্ড হারবারের নজরে এবার এই তারকা বিদেশি
যদিও এটিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।এই ঘটনা ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিমান চালনা সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পাইলট সংগঠনগুলি তদন্তে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার দাবি করছে, যাতে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা যায়।