বাম রাজ্যে আশা কর্মীদের ৫০ দিনের অনশন, চুল কেটে প্রতিবাদ

ভারতের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত আশা (অ্যাক্রিডিটেড সোশ্যাল হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট asha) কর্মীরা কেরলের রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে গত ৫০ দিন ধরে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার এই…

asha workers protest in left led state

ভারতের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত আশা (অ্যাক্রিডিটেড সোশ্যাল হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট asha) কর্মীরা কেরলের রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে গত ৫০ দিন ধরে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার এই আন্দোলন নতুন মোড় নিয়েছে, যখন কয়েক জন আশা কর্মী তাদের চুল কেটে ফেলেছেন এবং কেউ কেউ মাথা মুণ্ডন করে তাদের দাবির প্রতি সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়াও, গত সপ্তাহে প্রতিবাদের স্থান সচিবালয়ের বাইরে একদল আশা কর্মী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন। তাদের প্রধান দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে অবসর-পরবর্তী সুবিধা, সম্মানী বৃদ্ধি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।

   

আরো দেখুন অফিস টাইমে টিকিট কাউন্টার কম থাকায় বিপাকে মেট্রো যাত্রীরা

Advertisements

আশা কর্মীদের ভূমিকা (asha)

আশা কর্মীরা ভারতের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারা দরজায় দরজায় গিয়ে পুষ্টি, স্যানিটেশন, টিকাদান এবং গর্ভবতী ও নবজাতকদের যত্ন নিয়ে সচেতনতা ছড়ান। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তাদের অবদান ছিল অসামান্য। কেরলে জিকা ও নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে তাদের কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও, তাদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের উদাসীনতা তাদের এই আন্দোলনে বাধ্য করেছে।

বর্তমানে আশা কর্মীদের সম্মানী 

বর্তমানে কেরলের ২৬,১২৫ জন আশা (asha) কর্মী প্রতি মাসে ৭,০০০ টাকা সম্মানী পান, যা রাজ্য সরকার প্রদান করে। এছাড়া কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৩,০০০ টাকা নির্দিষ্ট প্রণোদনা এবং বিভিন্ন কাজের জন্য অতিরিক্ত প্রণোদনা হিসেবে আরও ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। কিন্তু তাদের অভিযোগ, এই টাকার পরিমাণ অপ্রতুল, শর্তযুক্ত এবং অনিয়মিত। তারা দাবি করছেন, সম্মানী ২১,০০০ টাকা অব্দি বাড়ানো হোক, অবসরকালীন সুবিধা হিসেবে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হোক এবং তাদের স্থায়ী কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

এই আন্দোলনের শুরু ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন কেরল আশা হেলথ ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (কেএএইচডব্লিউএ) সচিবালয়ের সামনে ধর্না শুরু করে। প্রথমদিকে তাদের দাবি ছিল তিন মাসের বকেয়া সম্মানী ও প্রণোদনার অর্থ পরিশোধ। সরকার পরে এই বকেয়া মিটিয়ে দিলেও, মূল দাবিগুলি পূরণে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এরপর থেকে আন্দোলন ক্রমশ তীব্র হয়েছে। গত ২০ মার্চ থেকে অনশন শুরু হয়েছে, এবং সোমবার চুল কেটে ও মাথা মুণ্ডনের মতো নাটকীয় প্রতিবাদে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

আশা কর্মীদের বক্তব্য 

আশা কর্মীদের একজন প্রতিবাদী, কুঝিপ্পারাম্বা থঙ্কামনি, বলেন, “আমি ১৭ বছর আগে আশা কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। তখন দিনে এক-দুই ঘণ্টা কাজ করতাম। এখন পুরো দিন কাজ করেও শেষ হয় না। অথচ আমার অক্টোবরে সম্মানী এসেছিল মাত্র ৬,৩০০ টাকা, কারণ অসুস্থতার জন্য একটি মিটিং মিস করেছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “এটা সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। যারা দিনে আট ঘণ্টা কাজ করে, তারা কি স্বেচ্ছাসেবক?”

কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জের দাবি

কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ দাবি করেছেন, রাজ্যে আশা কর্মীরা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানী পান এবং ৯০% কর্মী মাসে ১০,০০০ থেকে ১৩,৫০০ টাকা উপার্জন করেন। তিনি বলেন, এটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প, তাই মূল দায়িত্ব কেন্দ্রের। কিন্তু প্রতিবাদীরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, রাজ্য সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার।

বিরোধী দল কংগ্রেস এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। বিরোধী নেতা ভি ডি সতীশন সরকারের “নেতিবাচক মনোভাব” এর সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর আশা কর্মীদের “ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অগ্নিপরীক্ষিত নায়ক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই প্রতিবাদ কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের প্রতি ব্যবস্থার অবমূল্যায়নের প্রতিফলন।”

সরকারের তরফে কিছু পদক্ষেপ

সরকারের তরফে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সম্মানীর জন্য ১০টি শর্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু আশা কর্মীরা বলছেন, এটি যথেষ্ট নয়। তারা তাদের মূল দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই প্রতিবাদ শুধু কেরলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য রাজ্যের আশা কর্মীরাও এটির দিকে নজর রেখেছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

সম্প্রতি উল্লেখ করেছে, জনস্বাস্থ্য ও ন্যূনতম মজুরি রাজ্যের বিষয়, এবং আশা কর্মীদের কল্যাণে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সোমবারের প্রতিবাদে এক আশা কর্মী অশ্রুসিক্ত হয়ে মাথা মুণ্ডন করেছেন, যা তাদের হতাশা ও দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলন কেবল তাদের ন্যায্য অধিকারের লড়াই নয়, বরং ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নারী শ্রমিকদের অবদানের স্বীকৃতির লড়াই। সরকার কীভাবে এই সংকটের সমাধান করে, তা ভবিষ্যতে দেশের জনস্বাস্থ্য নীতির দিক নির্ধারণ করবে।