কালাজাদুতে আস্থা রেখে কেরলে হাইকোর্ট থেকে সরল বামফ্রন্ট সরকার

কেরলের বামপন্থী সরকারের কীর্তি নজর কেড়েছে জন সাধারণের। আশ্চর্যজনক ভাবে কেরলের বামপন্থী সরকার ব্ল্যাক ম্যাজিক, (Black-Magic) তন্ত্র-মন্ত্র এবং অন্যান্য অমানবিক প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো…

Black-Magic in bamfront

কেরলের বামপন্থী সরকারের কীর্তি নজর কেড়েছে জন সাধারণের। আশ্চর্যজনক ভাবে কেরলের বামপন্থী সরকার ব্ল্যাক ম্যাজিক, (Black-Magic) তন্ত্র-মন্ত্র এবং অন্যান্য অমানবিক প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো আইন প্রণয়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কথা রাজ্য সরকার কেরল হাইকোর্টে জমা দেওয়া একটি হলফনামায় জানিয়েছে।

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নীতিন জামদারের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে দাখিল করা এই হলফনামায় সরকার বলেছে, যদিও জনস্বার্থ মামলায় (পিআইএল) উত্থাপিত সামাজিক উদ্বেগগুলি আদালত লক্ষ্য করেছে, তবুও আইনসভাকে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য বাধ্য করা যায় না। রাজ্যের মন্ত্রীসভা ২০২৩ সালের ৫ জুলাই একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এই আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

   

আইন প্রণয়নের পটভূমি

২০১৯ সালে, প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি (Black-Magic) কে.টি. থমাসের নেতৃত্বে গঠিত কেরালা আইন সংস্কার কমিশন রাজ্য সরকারের কাছে একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন জমা দেয়। এই প্রতিবেদনে “দ্য কেরালা প্রিভেনশন অ্যান্ড ইরাডিকেশন অফ ইনহিউম্যান ইভিল প্র্যাকটিসেস, সোর্সারি অ্যান্ড ব্ল্যাক ম্যাজিক বিল, ২০১৯” নামে একটি খসড়া আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছিল।

এই খসড়া আইনের লক্ষ্য ছিল কালো জাদু, (Black-Magic) তন্ত্র-মন্ত্র, মানব বলি এবং অন্যান্য অমানবিক প্রথা নিষিদ্ধ করা। ২০২২ সালে, কেরালা যুক্তিবাদী সংঘম নামে একটি যুক্তিবাদী সংগঠন হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকের মতো একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানায়।

২০২২ সালের অক্টোবরে, রাজ্য সরকার আদালতকে জানিয়েছিল যে তারা এই বিষয়ে আইন প্রণয়নের কথা বিবেচনা করছে। তবে, ২০২৩ সালের জুনে এই মামলাটি খারিজ হয়ে যায় কারণ মামলাকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। পরে মামলাটি পুনরুদ্ধার করা হয়, এবং হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের বর্তমান অবস্থান স্পষ্ট করতে বলে। ২০২৫ সালের ২১ জুন, রাজ্যের গৃহ বিভাগ একটি হলফনামা দাখিল করে, যাতে বলা হয় যে মন্ত্রীসভা এই আইন প্রণয়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পিআইএল-এর পটভূমি ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

কেরালা যুক্তিবাদী সংঘমের মামলাটি ২০২২ সালে পাথানামথিট্টা জেলায় দুই মহিলার নৃশংস মানব বলির ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়ের করা হয়েছিল। এই ঘটনায় তিনজন ব্যক্তি, যার মধ্যে একটি দম্পতি ছিল, জড়িত ছিল। এই ঘটনা রাজ্য জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং কালো জাদু ও অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের দাবি জোরালো হয়।

যুক্তিবাদী সংঘম (Black-Magic) তাদের আবেদনে বলেছে যে মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক ইতিমধ্যেই “মহারাষ্ট্র প্রিভেনশন অ্যান্ড ইরাডিকেশন অফ হিউম্যান স্যাক্রিফাইস অ্যান্ড আদার ইনহিউম্যান প্র্যাকটিসেস অ্যান্ড ব্ল্যাক ম্যাজিক অ্যাক্ট, ২০১৩” এবং অনুরূপ আইন প্রণয়ন করেছে। তারা আরও দাবি করেছে যে কেরালায় কালো জাদু ও অন্ধবিশ্বাসের নামে অপরাধ বাড়ছে, যা সামাজিক সচেতনতা এবং আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে মোকাবিলা করা প্রয়োজন।

সরকারের যুক্তি

হলফনামায় সরকার জানিয়েছে, “আইনসভার বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য রিট অফ ম্যান্ডামাস জারি করা যায় না।” তারা আরও বলেছে যে ২০২২ সালে খসড়া বিলটি প্রস্তুত করা হলেও, মন্ত্রীসভার বিস্তারিত আলোচনার পর ২০২৩ সালের ৫ জুলাই এটি প্রণয়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে এটি একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

হাইকোর্টের প্রতিক্রিয়া (Black-Magic)

হাইকোর্ট সরকারের (Black-Magic) এই হলফনামার সমালোচনা করেছে, বলেছে যে এটি কেবল জানিয়েছে যে ২০২২ সালে একটি বিল বিবেচনা করা হয়েছিল এবং নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এটি প্রণয়ন করা হয়নি। আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে এই ধরনের প্রথা নিয়ন্ত্রণে কোনো আইনি পদক্ষেপ না থাকায় সামাজিক সমস্যা অব্যাহত থাকতে পারে। আদালত রাজ্য সরকারকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আরেকটি বিস্তারিত হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে আইন ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য কী বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা স্পষ্ট করা হয়।

Advertisements

ব্লু টাইগার্সদের পথচলায় শীর্ষ পাঁচ কোচের তালিকায় ইগর স্টিমাচ থেকে সুখবিন্দর সিং!

সমাজের প্রতিক্রিয়া

এই সিদ্ধান্ত সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কেরালার মতো শিক্ষিত রাজ্যে কালো জাদু ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে আইন না করা হতাশাজনক।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “সরকারের এই পিছু হটা পাথানামথিট্টার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।”

কেরালা যুক্তিবাদী সংঘম (Black-Magic) এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, “২০১৯ সালের কে.টি. থমাস কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না করা সরকারের অদূরদর্শিতা।” তারা আরও দাবি করেছে যে সিনেমা, সিরিয়াল এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অন্ধবিশ্বাস প্রচারকারী কন্টেন্ট নিষিদ্ধ করা উচিত, যদি না তা শৈল্পিক বা শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে হয়।

অন্যান্য রাজ্যের উদাহরণ

মহারাষ্ট্রে ২০১৩ সালে প্রণীত “মহারাষ্ট্র প্রিভেনশন অ্যান্ড ইরাডিকেশন অফ হিউম্যান স্যাক্রিফাইস অ্যান্ড আদার ইনহিউম্যান প্র্যাকটিসেস অ্যান্ড ব্ল্যাক ম্যাজিক অ্যাক্ট” কালো জাদু, মানব বলি এবং অন্ধবিশ্বাসের নামে শোষণমূলক প্রথা নিষিদ্ধ করে। এই আইনের অধীনে ন্যূনতম ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কর্ণাটকেও অনুরূপ আইন রয়েছে।

কেরালা সরকারের (Black-Magic) এই সিদ্ধান্ত রাজ্যে অন্ধবিশ্বাস ও অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি পশ্চাৎপদ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পাথানামথিট্টার মতো ঘটনা এবং ২০২৪ সালে কোট্টায়ামের নাভিন থমাস ও তাঁর স্ত্রী দেবী মাধবানের আত্মহত্যার ঘটনা, যা কালো জাদু অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়, এই ধরনের আইনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

হাইকোর্টের নির্দেশে সরকারকে (Black-Magic) এখন বিকল্প ব্যবস্থা স্পষ্ট করতে হবে। যুক্তিবাদী সংগঠন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। কেরালার মতো শিক্ষিত ও প্রগতিশীল রাজ্যে অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামোর অভাব সামাজিক সংস্কারের পথে একটি বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে, তা এখন সময়ের উপর নির্ভর করছে।