নয়াদিল্লি ৬ অক্টোবর: সুপ্রিম কোর্টে এক অভূতপূর্ণ নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে (Supreme Court)। শুনানির সময় এক আইনজীবী ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের দিকে জুতো ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার একটি মামলার শুনানির সময়। অভিযুক্ত আইনজীবীকে দিল্লি পুলিশ তৎক্ষণাৎ হেফাজতে নিয়েছে এবং তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অভিযুক্তের নাম রাকেশ কিশোর বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
এই ঘটনা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পবিত্রতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানি চলাকালীন রাকেশ কিশোর হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি আদালত কক্ষে উপস্থিত প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের দিকে জুতো ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন। তবে জুতোটি প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছায়নি এবং আদালতের নিরাপত্তাকর্মীরা তৎক্ষণাৎ তাকে আটক করে।
‘পারফেক্ট স্ট্রাইক’! বিশ্বকাপে পাক-বধের পর শাহের টুইটে কীসের ইঙ্গিত?
ঘটনার পর শুনানি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। প্রধান বিচারপতি গাভাই শান্তভাবে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আমাকে প্রভাবিত করে না। আমি এসব থেকে বিচলিত হই না।” দিল্লি পুলিশ অভিযুক্ত রাকেশ কিশোরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাকেশ একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত আইনজীবী এবং সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত মামলা পরিচালনা করেন।
তবে এই ঘটনার পেছনে তার উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ তদন্ত করছে যে এটি কোনও ব্যক্তিগত ক্ষোভ, মানসিক অস্থিরতা, নাকি পরিকল্পিত ঘটনা। রাকেশের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা এবং নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।এই ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এমন একটি ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন আইনজগতের বিশেষজ্ঞরা। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের একজন সদস্য বলেন, “এটি আদালতের মর্যাদা এবং আইনজীবীদের পেশাগত নীতির উপর আঘাত। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।” বার অ্যাসোসিয়েশন রাকেশ কিশোরের আইনজীবী লাইসেন্স স্থগিত করার বিষয়ে আলোচনা করছে বলেও জানা গেছে।
এই ঘটনার তদন্তে দিল্লি পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ এবং আদালত কক্ষে উপস্থিত সাক্ষীদের বয়ান পরীক্ষা করছে। রাকেশ কিশোরের পূর্ববর্তী আচরণ এবং তার মানসিক স্থিতিশীলতাও তদন্তের অংশ হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুনানির সময় রাকেশ কোনও একটি মামলার রায় নিয়ে উত্তেজিত হয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক ধারণা।
তবে এর পেছনে অন্য কোনও ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।প্রধান বিচারপতি গাভাইয়ের শান্ত প্রতিক্রিয়া এই ঘটনার মধ্যেও আদালতের মর্যাদা বজায় রেখেছে। তিনি শুনানি পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, “আদালতের কাজ এই ধরনের ঘটনায় বাধাগ্রস্ত হবে না।” এই ঘটনা আইনজীবী সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হবে। এছাড়া, আইনজীবীদের জন্য কঠোর আচরণবিধি প্রণয়নের বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।