লাদাখে উত্তাল পরিস্থিতি, বিক্ষোভের পর পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার ৫০

রাজ্যত্ব এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে লাদাখ (Ladakh) জুড়ে চলা আন্দোলন নতুন করে সহিংস রূপ নিল। বুধবারের ভয়াবহ সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের পর বৃহস্পতিবার ভোররাতে লেহ-এ পুলিশ…

রাজ্যত্ব এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে লাদাখ (Ladakh) জুড়ে চলা আন্দোলন নতুন করে সহিংস রূপ নিল। বুধবারের ভয়াবহ সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের পর বৃহস্পতিবার ভোররাতে লেহ-এ পুলিশ চালায় ব্যাপক অভিযান। এই প্রভাতের তল্লাশি অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দ্র গুপ্ত, এবং সেই প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন দেখা গেল বৃহস্পতিবার।

পুলিশ ইতিমধ্যেই সহিংসতার ঘটনায় একটি এফআইআর দায়ের করেছে এবং কংগ্রেস কাউন্সিলর ফুনতসোগ স্ট্যানজিন ত্সেপাগের নাম উল্লেখ করেছে। যদিও তিনি গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার অভিযোগ তুলেছে যে পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুকের উস্কানিমূলক বক্তব্যই এই বিক্ষোভকে সহিংস করে তুলেছে।

   

গত ১৫ দিন ধরে সোনম ওয়াংচুক লাদাখের রাজ্যত্ব ও সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে অনশন করছিলেন। তাঁর বক্তব্যে নেপালের সাম্প্রতিক “Gen Z” আন্দোলনের উল্লেখ এবং আরব বসন্তের উদাহরণ জনতাকে উত্তেজিত করেছে বলে কেন্দ্রের দাবি। বুধবার সহিংসতা শুরু হওয়ার পর ওয়াংচুক তাঁর অনশন প্রত্যাহার করেন, তবে তার আগেই জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে বিজেপি দফতর ও লাদাখ হিল কাউন্সিল সচিবালয়ে হামলা চালায়।

এই হামলায় অন্তত চারজন বিক্ষোভকারী নিহত এবং প্রায় ৯০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ। ঘটনার পরপরই প্রশাসন লেহ জেলায় কারফিউ জারি করে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইটিবিপি, সিআরপিএফ ও স্থানীয় পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি, কার্গিল জেলাতেও রাজ্যত্বের দাবিতে ডাকা বনধকে কেন্দ্র করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার ও রাজ্যের বিভাজনের পর লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। শুরুতে অনেকেই, এমনকি ওয়াংচুক নিজেও, এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাব ও স্থানীয় অধিকার হরণের আশঙ্কা দেখা দেয়।

Advertisements

এই অসন্তোষ থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় বড় আন্দোলন। লেহর বৌদ্ধ অধ্যুষিত অঞ্চল এবং কার্গিলের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল – দুই সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন একত্রিত হয়ে তৈরি করে ‘অ্যাপেক্স বডি অব লেহ’ এবং ‘কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’।

কেন্দ্র এই দাবিগুলি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করলেও বহু দফার বৈঠকেও কোনো সমাধান হয়নি। চলতি বছরের মার্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকও ব্যর্থ হয়। লাদাখের নেতারা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র তাদের মূল দাবিগুলি – রাজ্যত্ব, ৬ষ্ঠ তফসিলের অধীনে সাংবিধানিক সুরক্ষা এবং জমি-সংস্কৃতির সুরক্ষার প্রস্তাব – সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে লাদাখের আন্দোলন আর শুধুমাত্র রাজনৈতিক ইস্যু নয়, বরং এটি এখন মানুষের পরিচয়, অধিকার ও ভবিষ্যতের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। প্রশাসনের কঠোর দমননীতির পরও রাজ্যত্বের দাবিতে মানুষের লড়াই থামছে না, বরং আরও তীব্র হচ্ছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News