নয়াদিল্লি: লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে৷ এই দাবিকে কেন্দ্রকরে শুরু হওয়া আন্দোলন ফের রক্তাক্ত রূপ নিল। বুধবার লেহ-তে মিছিল চলাকালীন অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষে অন্তত চার জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫৯ জনেরও বেশি, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ২২ জন পুলিশকর্মী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আন্দোলনকে হিংসার দিকে ঠেলে দেওয়ার পিছনে রয়েছে পরিবেশ-অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুকের “উসকানিমূলক বক্তব্য।”
বিজেপির অভিযোগ: কংগ্রেসের নেপথ্য চক্রান্ত
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপি সরাসরি কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছে। দলের জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের দাবি, “আজকের সহিংসতাকে ‘Gen Z আন্দোলন’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে দেখা গিয়েছে, এটি আসলে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ষড়যন্ত্র।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, লেহ-র আপার ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর স্টানজিন সেপাং হাতে অস্ত্র নিয়ে বিজেপি অফিসে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গও টেনে আনেন সম্বিত।
ওয়াংচুকের পাল্টা বক্তব্য Ladakh Statehood Protest Violence
অন্যদিকে, ভিডিও বার্তায় সোনম ওয়াংচুক দাবি করেন, কংগ্রেসের পক্ষে এতটা প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব নয় যে হাজার হাজার মানুষ তাদের নির্দেশে রাস্তায় নামবেন। তিনি বলেন, তাঁর অনশন ছিল মূলত লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করা এবং পূর্ণ রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখে।
কেন্দ্রের অবস্থান
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার দুপুর আড়াইটার পর থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পাশাপাশি সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যাতে পুরোনো ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রচার না করা হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “লাদাখবাসীর দাবি পূরণে ভারত সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতিমধ্যেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির আলোচনায় বহু অগ্রগতি হয়েছে।”
মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, লাদাখে তফসিলি উপজাতিদের সংরক্ষণ ৪৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করা হয়েছে, মহিলাদের জন্য পরিষদে এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত হয়েছে, ভুটি ও পুরগি ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং ১,৮০০ শূন্যপদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
‘Gen Z আন্দোলন’-এর উল্লেখ
তবে মন্ত্রকের অভিযোগ, “কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তি এই অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা সংলাপ প্রক্রিয়াকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছেন।” সোনম ওয়াংচুকের আরব বসন্ত ও নেপালের ‘Gen Z আন্দোলন’-এর উল্লেখকে কেন্দ্র উসকানি হিসেবেই দেখছে।
২৪ সেপ্টেম্বর সকালে ওয়াংচুকের অনশন মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসা জনতার একাংশ বিজেপি কার্যালয় ও প্রশাসনিক দফতরে হামলা চালায়, অগ্নিসংযোগ করে ও পুলিশ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভাষায়, “সহিংস জনতা স্পষ্টতই ওয়াংচুকের বক্তব্যে প্রভাবিত হয়েছিল। ঘটনাচক্রে এই সময়েই তিনি তাঁর অনশন ভেঙে দেন।”
পরবর্তী বৈঠকের সময়সূচি
কেন্দ্র জানিয়েছে, লাদাখের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর আলোচনার বৈঠক এবং ৬ অক্টোবর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির পরবর্তী বৈঠক নির্ধারিত হয়েছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
