পৃথক রাজ্যের দাবিতে অগ্নিগর্ভ লাদাখ৷ বুধবারের লেহ-তে ভয়াবহ হিংসায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে৷ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) সোনম ওয়াংচুককে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছে৷ কেন্দ্রের দাবি, “বিক্ষোভে উস্কানি দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য জনগণকে প্ররোচিত করেছে। অনশনের মাঝেও তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেননি৷ বরং অ্যাম্বুলেন্স করে নিজের গ্রামে চলে গিয়েছেন।”
প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সিবিআই ওয়াংচুকের হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড লার্নিং (HIAL)-এর FCRA (Foreign Contribution Regulation Act) সংশ্লিষ্ট অভিযোগে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে। তবে এখনও কোনো FIR দায়ের হয়নি। সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, যদি তদন্তে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে পূর্ণাঙ্গ মামলা গঠিত হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে পারেন বাস্তবের ব়্যাঞ্চো৷ প্রমাণ না মিললে অবশ্য অনুসন্ধান বন্ধ করা হবে।
গত অগাস্ট মাসে লাদাখ প্রশাসন HIAL-এর জমি বরাদ্দ বাতিল করে। প্রশাসনের বক্তব্য, “জমিটি বরাদ্দকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়নি এবং কোনো লিজ চুক্তি সম্পন্ন হয়নি।” এই পদক্ষেপের পর থেকেই সংস্থাটি এবং সোনম ওয়াংচুক সরকারের নজরদারিতে এসেছেন।
উস্কানিমূলক বক্তৃতা Ladakh Sonam Wangchuk Incitement
ঘটনার দিন লেহে শহরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে৷ MHA-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “২৪ সেপ্টেম্বর প্রায় ১১.৩০ টার দিকে, সোনম ওয়াংচুকের উস্কানিমূলক বক্তৃতার প্রভাবে একদল মানুষ অনশন স্থল ত্যাগ করে লেহের সিইসি অফিস এবং একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলা চালায়। তারা অফিসে আগুন লাগায়, নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশকে আঘাত করে, এবং পুলিশ ভ্যান দগ্ধ করে। পুলিশের আত্মরক্ষার স্বার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।”
MHA আরও উল্লেখ করেছে, “যেসব দাবিতে শ্রী ওয়াংচুক অনশন করেছিলেন, তা HPC-এর আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। বহু নেতার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি অনশন চালিয়ে যান এবং জনগণকে ভুল তথ্য দিয়ে প্ররোচিত করেন। তার বক্তব্যে আরব স্প্রিং-ধরনের প্রতিবাদ ও নেপালের Gen Z আন্দোলনের উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে।”
লাদাখের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
উত্তেজনার মাঝেও কেন্দ্র জানিয়েছে, “সরকার লাদাখের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পর্যাপ্ত সাংবিধানিক নিরাপত্তা প্রদান করবে।” তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনশন ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের সঙ্গে সহিংসতার সংযোগ নিয়ে রাজনৈতিক চাপ এবং সিবিআই অনুসন্ধান ভবিষ্যতের পরিস্থিতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই ঘটনার প্রভাব শুধু লেহ বা লাদাখে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সমগ্র রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রশাসনিক নীতি এবং সংবিধানিক নিরাপত্তার বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন প্রশ্ন তোলে। HIAL-এর কার্যক্রম, সোনম ওয়াংচুকের রাজনৈতিক ভূমিকা এবং সিবিআই অনুসন্ধান—এসব মিলিয়ে আগামী দিনে লাদাখের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বড় প্রভাব ফেলবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
