বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রের জলসঙ্কটে ‘‘জল ধরো জল ভরো’ পরামর্শ কুনালের

গ্রীষ্মের শুরুতেই ভারতীয় জনতা পার্টি (bjp) শাসিত মহারাষ্ট্রে তীব্র জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে মারাঠওয়াড়া, বিদর্ভ এবং উত্তর মহারাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চলে পানীয় জলের…

bjp maharastra

গ্রীষ্মের শুরুতেই ভারতীয় জনতা পার্টি (bjp) শাসিত মহারাষ্ট্রে তীব্র জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে মারাঠওয়াড়া, বিদর্ভ এবং উত্তর মহারাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চলে পানীয় জলের অভাবে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত পোস্টে দাবি করা হয়েছে, মহিলাদের গভীর কুয়োতে নেমে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে, যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরছে।

জলসঙ্কটের প্রকৃতি ও কারণ (bjp)

মহারাষ্ট্রের (bjp) জলসঙ্কট নতুন নয়, তবে ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে এটি অস্বাভাবিক তীব্রতা নিয়েছে। রাজ্যের জলাধারগুলিতে জলের মজুদ বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে। মারাঠওয়াড়ার প্রধান জলাধারগুলির মধ্যে জয়কওয়াড়ি বাঁধে জলের মজুদ মাত্র ৫% এর কাছাকাছি, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। গত মৌসুমে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত ব্যবহার এই সঙ্কটের প্রধান কারণ। এছাড়া, জল সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিকল্পনা এবং অবকাঠামোর অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

   

গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। অনেক গ্রামে দিনে মাত্র একবার ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হচ্ছে, তাও অপর্যাপ্ত। মহিলা এবং শিশুদের কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। শহরাঞ্চলেও, বিশেষ করে পুণে, নাগপুর এবং নাসিকের মতো শহরে, জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। কিছু এলাকায় সপ্তাহে দু’দিন জল সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিতর্ক ও অভিযোগ

এই জলসঙ্কট নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও তীব্র হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সামাজিক মাধ্যমে মহারাষ্ট্র সরকারের (bjp) সমালোচনা করে বলেছেন, “গরম পড়তে না পড়তেই বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে জলসঙ্কট। মহিলাদের গভীর কুয়োতে নামতে হচ্ছে।” তিনি মহারাষ্ট্র সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পের মতো উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।

বিরোধী দল কংগ্রেস এবং শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) অভিযোগ করেছে যে, বিজেপি (bjp) নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকার জল ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কংগ্রেস নেতা নানা পাটোল বলেছেন, “বিজেপি সরকার কৃষক ও গ্রামবাসীদের জন্য কিছুই করেনি। জল সংরক্ষণের কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই।” এদিকে, শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে সরকারের উপর জলসঙ্কট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বিজেপি সরকার পাল্টা দাবি করেছে যে, তারা জলসঙ্কট মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে জানিয়েছেন, “আমরা ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে জল সরবরাহ বাড়িয়েছি এবং জলাধার সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প চালু করেছি।” তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই পদক্ষেপগুলি অপর্যাপ্ত এবং দেরিতে নেওয়া হয়েছে।

আইনি জট এড়াতে OMR ছাড়াই তালিকা! কীভাবে সম্ভব? উঠছে প্রশ্নের ঝড়

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

জলসঙ্কটের ফলে মহারাষ্ট্রের কৃষি ও অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মারাঠওয়াড়া ও বিদর্ভের কৃষকরা জানিয়েছেন, সেচের জন্য জলের অভাবে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া, জলের অভাবে গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। গ্রামীণ অঞ্চলে জলের জন্য দীর্ঘ সারি এবং সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে।

Advertisements

শহরাঞ্চলে, জলের অভাবে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পুণে ও মুম্বাইয়ের আইটি হাবগুলিতে জল সরবরাহের অনিয়মের কারণে কর্মীদের কাজে বাধা পড়ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জলের অভাবে পর্যটন শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরকারি উদ্যোগ ও সমালোচনা

মহারাষ্ট্র সরকার জলসঙ্কট মোকাবিলায় জলবণ্টন প্রকল্প এবং ট্যাঙ্কার সরবরাহ বাড়ানোর ঘোষণা করলেও, এই পদক্ষেপগুলি স্থানীয়দের কাছে পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না। ‘জলযোগ’ প্রকল্প, যা গ্রামীণ এলাকায় জল সরবরাহের জন্য চালু করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মহারাষ্ট্রের জলসঙ্কট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। জল সংরক্ষণ, বৃষ্টির জল সংগ্রহ, এবং ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর নীতি গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া, কৃষি খাতে জলের অপচয় কমাতে ড্রিপ ইরিগেশনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া উচিত।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তুলনা

কুণাল ঘোষের পোস্টে পশ্চিমবঙ্গের ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পের উল্লেখ করা হয়েছে, যা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং জলাধার পুনরুদ্ধারের জন্য চালু করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের উদ্যোগও প্রশংসিত হয়েছে। এই প্রকল্পগুলি মহারাষ্ট্রের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

মহারাষ্ট্রের জলসঙ্কট একটি গুরুতর সমস্যা, যা রাজ্য সরকারের জল সরবরাহ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে তুলে ধরেছে। তীব্র গ্রীষ্মের মধ্যে এই সঙ্কট জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সরকারের তরফে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।

অন্যথায়, এই সঙ্কট আগামী বছরগুলিতে আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। মহারাষ্ট্রের জনগণ এখন শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাশায় রয়েছেন, এবং রাজনৈতিক দলগুলির উচিত জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া।