মুম্বই-গোয়া যাত্রার ক্লান্তি কমাতে কোঙ্কন রেলওয়ের অভিনব প্রয়াস

মুম্বই থেকে গোয়া (Konkan Railway) যাওয়ার পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যাম এবং পাহাড়ি রাস্তার ক্লান্তিকর যাত্রার দিন শেষ হতে চলেছে। কোঙ্কণ রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড…

Konkan Railway new and unique initiative

মুম্বই থেকে গোয়া (Konkan Railway) যাওয়ার পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যাম এবং পাহাড়ি রাস্তার ক্লান্তিকর যাত্রার দিন শেষ হতে চলেছে। কোঙ্কণ রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড (কেআরসিএল) ভারতের প্রথম গাড়ি ফেরি ট্রেন পরিষেবা চালু করতে প্রস্তুত, যা গণেশ চতুর্থীর উৎসবের ঠিক আগে শুরু হবে।

এই উদ্ভাবনী পরিষেবাটি যাত্রীদের তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ট্রেনে করে মহারাষ্ট্রের কোলাড থেকে গোয়ার ভের্নায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে, যখন তারা সংযুক্ত যাত্রীবাহী কোচে আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করবেন। এই পরিষেবাটি মুম্বই-গোয়া রুটে ভ্রমণের সময়কে ২০-২২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে মাত্র ১২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনবে, যা উৎসবের সময়ে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি নিয়ে আসবে।

   

ফেরি ট্রেন পরিষেবার বিবরণ

কোঙ্কণ রেলওয়ে এই নতুন পরিষেবাটি ২৩ আগস্ট, ২০২৫ থেকে শুরু করবে, যা গণেশ চতুর্থীর উৎসবের ভিড়ের জন্য সময়োপযোগী। এই ট্রেনটি মহারাষ্ট্রের কোলাড থেকে গোয়ার ভের্না পর্যন্ত চলবে। প্রতিটি ট্রেনে ২০টি বিশেষভাবে ডিজাইন করা ওয়াগন থাকবে, যার প্রতিটি দুটি গাড়ি বহন করতে পারবে, অর্থাৎ প্রতি ট্রিপে মোট ৪০টি গাড়ি পরিবহন করা সম্ভব।

তবে, এই পরিষেবাটি শুধুমাত্র তখনই চলবে যদি কমপক্ষে ১৬টি গাড়ি বুক করা হয়। প্রতি গাড়ির জন্য একমুখী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭,৮৭৫ টাকা। যাত্রীদের জন্য দুজন ৩এসি কোচে (প্রতি ব্যক্তি ৯৩৫ টাকা) এবং একজন সেকেন্ড-ক্লাস এসএলআর কোচে (১৯০ টাকা) ভ্রমণ করতে পারবেন।

যাত্রীদের কোলাড স্টেশনে বিকেল ২টার মধ্যে পৌঁছাতে হবে গাড়ি লোডিং এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য। ট্রেনটি বিকেল ৫টায় ছাড়বে এবং পরের দিন ভোর ৫টায় ভের্নায় পৌঁছাবে। নিরাপত্তার জন্য, গাড়িগুলি বেল্ট দিয়ে শক্তভাবে বাঁধা থাকবে এবং হ্যান্ডব্রেক লাগানো থাকবে। যাত্রার সময় কোনও যাত্রীকে গাড়ির ভিতরে থাকতে দেওয়া হবে না; তারা সংযুক্ত যাত্রীবাহী কোচে ভ্রমণ করবেন।

গণেশ চতুর্থীর জন্য বিশেষ গুরুত্ব

গণেশ চতুর্থী মহারাষ্ট্র এবং গোয়ার একটি প্রধান উৎসব, যখন হাজার হাজার পরিবার মুম্বই, পুনে এবং অন্যান্য এলাকা থেকে গোয়ায় ভ্রমণ করে। এই সময়ে হাইওয়েতে তীব্র ট্রাফিক জ্যাম এবং পশ্চিমঘাটের ঘুরপাক খাওয়া রাস্তাগুলি ভ্রমণকে ক্লান্তিকর করে তোলে।

কোঙ্কণ রেলওয়ের এই ফেরি ট্রেন পরিষেবা এই সমস্যার সমাধান করবে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি দ্রুত, নিরাপদ এবং আরামদায়ক বিকল্প প্রদান করবে। এই পরিষেবাটি শুধুমাত্র সময় বাঁচাবে না, বরং জ্বালানি খরচ এবং কার্বন নির্গমন কমিয়ে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের সুযোগ দেবে। এছাড়া, এটি কারপুলিং এবং পরিবারের সঙ্গে নিরাপদ ভ্রমণের সুযোগ উন্মুক্ত করবে।

কোঙ্কণ রেলওয়ের পটভূমি এবং অভিজ্ঞতা

এটি প্রথমবার নয় যে কোঙ্কণ রেলওয়ে গাড়ি পরিবহনের জন্য ট্রেন ব্যবহার করছে। গত বিশ বছর ধরে তারা রো-রো (রোল-অন/রোল-অফ) ট্রেনে ট্রাক পরিবহন করে আসছে, যা হাইওয়ে ট্রাফিক এবং জ্বালানি খরচ কমাতে সাহায্য করেছে। এই সাফল্যের উপর ভিত্তি করে, তারা এখন ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য এই মডেলটি প্রয়োগ করছে।

পূর্বে, ১৯৯০-এর দশকে ভারতীয় রেলওয়ে দিল্লি থেকে ব্যাঙ্গালোরের মধ্যে একটি অনুরূপ মোটরেল পরিষেবা চালু করেছিল, কিন্তু কম চাহিদার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এবার, মুম্বই-গোয়া রুটের জনপ্রিয়তা এবং গণেশ চতুর্থীর ভিড়ের কারণে এই পরিষেবাটি সফল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোলাড মুম্বইয়ের উপকণ্ঠ থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার দূরত্বে, এবং গোয়ার জনপ্রিয়তা কখনও কমে না, যা এই পরিষেবার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

Advertisements

ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধা

এই ফেরি ট্রেন পরিষেবাটি বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণকারীদের জন্য আদর্শ। যারা দীর্ঘ দূরত্বের ড্রাইভিংয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিরা, বা যারা তাদের বিলাসবহুল বা ক্লাসিক গাড়ির ক্ষতি এড়াতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ বিকল্প।

এছাড়া, শিশুদের জন্য বেবি সিট বা পোষা প্রাণীর জন্য ক্রেট নিয়ে ভ্রমণকারী পরিবারগুলির জন্য এই পরিষেবা অত্যন্ত সুবিধাজনক। যাত্রীরা এয়ার-কন্ডিশন্ড কোচে আরামে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং গোয়ায় পৌঁছে তাদের নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করে গন্তব্যে যেতে পারবেন, যা ভাড়া গাড়ির উপর নির্ভরতা কমাবে।

অশ্লীল কনটেন্ট রুখতে কড়া পদক্ষেপ, ২৫ অ্যাপ ও ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করল কেন্দ্র

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এই পরিষেবার ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে উৎসাহজনক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “কোঙ্কণ রেলওয়ে মুম্বই থেকে গোয়ার প্রথম গাড়ি ফেরি ট্রেন চালু করতে চলেছে। এটি ভ্রমণের সময় ১২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনবে এবং গণেশ উৎসবের সময় ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে সাহায্য করবে।”

আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, “এই নতুন উদ্যোগে আপনি আপনার গাড়ি ট্রেনে করে নিয়ে যেতে পারবেন এবং আরামদায়ক কোচে ভ্রমণ করতে পারবেন।” এই প্রতিক্রিয়াগুলি এই পরিষেবার প্রতি জনগণের আগ্রহ এবং উৎসাহের ইঙ্গিত দেয়।

কোঙ্কণ রেলওয়ের এই গাড়ি ফেরি ট্রেন পরিষেবা ভারতের রেল ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধুমাত্র ভ্রমণের সময় এবং ক্লান্তি কমাবে না, বরং পরিবেশবান্ধব এবং নিরাপদ ভ্রমণের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

গণেশ চতুর্থীর উৎসবের সময় এই পরিষেবা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হবে, এবং এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য রুটেও এই ধরনের পরিষেবা চালুর পথ প্রশস্ত করতে পারে। বুকিং শীঘ্রই শুরু হবে, তাই যারা গোয়ায় গণেশ চতুর্থী উদযাপন করতে চান, তাদের জন্য এখনই জায়গা সুরক্ষিত করার সময়।