পশ্চিমবঙ্গে ২০১০ সালের পর জারি করা সমস্ত অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণি (ওবিসি) সার্টিফিকেট বাতিল করার আদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (high court)। ২০২৪ সালের ২২ মে এই গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণা করে আদালত জানিয়েছে যে, এই সময়ের মধ্যে জারি করা প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক ওবিসি সার্টিফিকেট চাকরি বা শিক্ষায় সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
এই রায়ে ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৪২টি শ্রেণিকে ওবিসি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং ওবিসিদের A ও B বিভাগে উপ-শ্রেণিবিন্যাস সংক্রান্ত রাজ্যের নির্বাহী আদেশগুলিও বাতিল করা হয়েছে। এই রায় রাজ্যের রাজনীতি ও সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
রায়ের পটভূমি (high court)
কলকাতা হাইকোর্টের (high court)এই রায় এসেছে একটি জনস্বার্থ মামলার (পিআইএল) প্রেক্ষিতে, যেখানে ২০১০ সালের পরে ওবিসি শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। আদালতের বিচারপতি দ্বয় জানিয়েছেন যে, ওবিসি তালিকায় যুক্ত ৭৭টি সম্প্রদায়ের মধ্যে অধিকাংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা সংবিধানের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আদালতের মতে, এই শ্রেণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। ফলে, ২০১০ সালের পর জারি করা সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে। তবে, ২০১০ সালের আগে যারা ওবিসি তালিকায় ছিলেন, তাদের সার্টিফিকেট বৈধ থাকবে।
রায়ের প্রভাব
এই রায়ের (high court)ফলে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের ওবিসি সার্টিফিকেট অকার্যকর হয়ে গেছে, যা সরকারি চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং অন্যান্য সংরক্ষণ সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে সংরক্ষণের সুবিধা নিয়েছিলেন, তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। আদালতের এই রায়ে বলা হয়েছে, যারা ইতিমধ্যে ওবিসি সংরক্ষণের মাধ্যমে চাকরি বা শিক্ষায় সুযোগ পেয়েছেন, তাদের স্থান অপরিবর্তিত থাকবে, তবে ভবিষ্যতে এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করা যাবে না।
২০১০ সালের পর পশ্চিমবঙ্গে জারি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল রায় কলকাতা হাইকোর্টের
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
রায় (high court)ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি এই রায় মানি না। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব।” তিনি অভিযোগ করেছেন যে এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এটি রাজ্যের পশ্চাদপদ সম্প্রদায়ের মানুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ওবিসি তালিকায় বেশ কিছু সম্প্রদায়কে যুক্ত করেছিল, যা এখন বাতিল হয়েছে।
বিজেপি নেতারা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন যে তৃণমূল সরকার ওবিসি তালিকায় অযোগ্য সম্প্রদায়কে যুক্ত করে ভোটব্যাঙ্ক তৈরির চেষ্টা করেছিল। বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার বলেছেন, “এই রায় সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করেছে এবং প্রকৃত পশ্চাদপদ শ্রেণির অধিকার সুরক্ষিত করেছে।”
সমাজে প্রভাব
এই রায় (high court)পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। অনেক ওবিসি সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে ওবিসি সংরক্ষণ অনেকের জন্য জীবিকা ও শিক্ষার একমাত্র পথ ছিল, সেখানে এই রায় তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে, যারা এই শ্রেণিবদ্ধকরণের বিরোধিতা করেছিলেন, তারা মনে করেন যে এই রায় প্রকৃত পশ্চাদপদ শ্রেণির জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। তারা অভিযোগ করেছেন যে রাজ্য সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ওবিসি তালিকায় যুক্ত করে সংরক্ষণ ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে।
আইনি পদক্ষেপ
কলকাতা হাইকোর্টের (high court)এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। ২০২৪ সালের ২৭ অগাস্টে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা সংক্রান্ত শুনানির কথা ছিল, যেখানে রাজ্য সরকার তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। আইনজ্ঞরা মনে করেন, এই মামলা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে এবং এটি দেশের অন্যান্য রাজ্যেও ওবিসি সংরক্ষণ নীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি সংরক্ষণ ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন এনেছে। এটি রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যদিও রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে এর ফলাফল এখনও অনিশ্চিত। এই রায় শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের জন্যই নয়, বরং ভারতের সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।