প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ বিজয় সাগর (vijay-sagar) জোর দিয়ে বলেছেন যে, জঙ্গিদের নিছক হত্যা করে সন্ত্রাসবাদ শেষ করা সম্ভব নয়। তার বদলে হাফিজ সাঈদের মতো জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের লক্ষ্য করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা দায় স্বীকার করেছে, যার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাঈদ।
বিজয় সাগর একটি সাক্ষাৎকারে বলেন (vijay-sagar)
বিজয় সাগর (vijay-sagar) একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেন, “জঙ্গিদের হত্যা করা একটি অংশ মাত্র। কিন্তু এটি সমস্যার মূল সমাধান নয়। হাফিজ সাঈদের মতো ব্যক্তিরা, যারা এই হামলাগুলোর পরিকল্পনা করে এবং তাদের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সন্ত্রাসবাদের চক্র বন্ধ হবে না।” তিনি আরও জানান, এই ধরনের মাস্টারমাইন্ডরা প্রায়ই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার আড়ালে থাকে, যা তাদের ধরা কঠিন করে তোলে।
রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ক্লোস ডোর বৈঠক
পহেলগাঁও হামলার পর রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়ে একটি ক্লোস ডোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সূত্রের খবর, বৈঠকে পাকিস্তানের কাছে লস্কর-ই-তৈয়বার জড়িত থাকার বিষয়ে কঠিন প্রশ্ন তোলা হয়। এক্স-এ পোস্ট অনুযায়ী, হাফিজ সাঈদকে পাকিস্তানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে এবং তাকে সম্ভবত আইএসআইয়ের নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতের গোপন অভিযানের ভয় থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হচ্ছে।
হাফিজ সাঈদ ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী
বিজয় সাগর (vijay-sagar) বলেন, “হাফিজ সাঈদ ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি এখনও পাকিস্তানে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং তার রাজনৈতিক দল পরিচালনা করছেন। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।” তিনি পাকিস্তানের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, “যে দেশ সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয় এবং তাদের রাজনৈতিক মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করে, সেই দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো দরকার।”
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারত হাফিজকে ভারতে ফেরানোর জন্য পাকিস্তানের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছিল। এক্স-এ পোস্ট অনুযায়ী, সাঈদ বর্তমানে পাকিস্তানে ৩৩ বছরের কারাদণ্ডে রয়েছেন, কিন্তু তিনি তার রাজনৈতিক দল পরিচালনা করছেন। তার ছেলে তালহা সাঈদও লাহোর থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে, এই তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ব্লু কোল্টসের ঝড় আসছে! SAFF U19-এ ভারতের শক্তিশালী দল প্রকাশ
বিজয় সাগর জোর দিয়ে বলেন
বিজয় সাগর (vijay-sagar) জোর দিয়ে বলেন, “শুধুমাত্র জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসবাদ দমন করা যাবে না। এর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের উৎস বন্ধ করা প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “হাফিজ সাঈদের মতো ব্যক্তিরা শুধু হামলার পরিকল্পনাই করে না, তারা তরুণদের মধ্যে উগ্রবাদ ছড়ায়। তাদের প্রচার বন্ধ করা সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিজয় সাগর এই প্রেক্ষাপটে ভারতের কৌশল নিয়ে বলেন, “ভারতকে কূটনৈতিক এবং সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয় থাকতে হবে। জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের জঙ্গিদের সমর্থনের বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। একই সঙ্গে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্ভুল অভিযানের মাধ্যমে এই মাস্টারমাইন্ডদের নিষ্ক্রিয় করা দরকার।”
এক্স-এ আরেকটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, হাফিজ সাঈদকে পাকিস্তানে তার লাহোরের বাসভবনে সামরিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের তথ্য পাকিস্তানের সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থনের অভিযোগকে আরও জোরালো করে। তবে, এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
বিজয় সাগর আরও বলেন
বিজয় সাগর (vijay-sagar) আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। চীনের মতো দেশ, যারা হাফিজ সাঈদের ছেলের রাষ্ট্রসংঘের জঙ্গি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবে বাধা দিয়েছে, তাদের উপরও চাপ সৃষ্টি করা দরকার।”
তিনি ভারতের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু সরকারের নয়, এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।” তিনি শেষ করেন এই বলে, “হাফিজ সাঈদের মতো ব্যক্তিরা যতক্ষণ সক্রিয় থাকবে, ততক্ষণ শান্তি প্রতিষ্ঠা একটি দূরের স্বপ্ন হয়ে থাকবে। তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপই এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি।”