ওড়িশার ভুবনেশ্বরে অবস্থিত কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (kiit) বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নেপালি ছাত্রী প্রিসা সাহের হোস্টেলের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ার ঘটনা সকলকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে।
ঘটনা কি ঘটেছে (kiit)
১৯ বছর বয়সী প্রিসা, যিনি নেপালের পারসা জেলার বীরগঞ্জের বাসিন্দা এবং সরলাহীর মালঙ্গওয়ার শ্যাম সাহর মেয়ে, বৃহস্পতিবার (১ মে, ২০২৫) সন্ধ্যায় তার হোস্টেল কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি বিটেক প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন এবং পরীক্ষার জন্য হোস্টেলে থাকছিলেন।
নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু রানা দেউবা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে প্রিসার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঘটনার পরপরই নেপাল সরকার ভারত সরকার, ওড়িশা রাজ্য সরকার এবং দিল্লির নেপালি দূতাবাসের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা তদন্তের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছে।
ভারতের জন্য নেপালের রাষ্ট্রদূত ড. শঙ্কর পি শর্মা সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে শোক প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তারা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওড়িশা সরকার, পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছে।
লস্কর-আইএসআই-পাক সেনার জোটেই রক্তাক্ত পহেলগাঁও! বিস্ফোরক দাবি NIA-র
তদন্তের অগ্রগতি ও পুলিশের বিবৃতি
ভুবনেশ্বরের (kiit)পুলিশ কমিশনার এস. দেব দত্ত সিং জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রিসা সাহর মৃতদেহ তার হোস্টেল কক্ষে পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে মনে হলেও, পুলিশ এটিকে অপ্রাকৃত মৃত্যু (অনন্যাচারাল ডেথ) হিসেবে মামলা দায়ের করেছে।
ফরেনসিক ও পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। প্রিসার মৃতদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য ভুবনেশ্বরের এইমস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রিসার বাবা-মা শুক্রবার (২ মে, ২০২৫) ভুবনেশ্বরে পৌঁছাবেন, এবং তারপর পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হবে। ইনফোসিটি থানায় এই ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি ও পূর্ববর্তী ঘটনা
এই ঘটনা কেআইআইটি (kiit)বি শ্ববিদ্যালয়ে নেপালি ছাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগকে আরও তীব্র করেছে, কারণ এটি গত ৯০ দিনের মধ্যে একই হোস্টেলে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে, ২০২৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিটেক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রকৃতি লমসাল (২০) হোস্টেলে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত পাওয়া গিয়েছিলেন।
প্রকৃতির মৃত্যু নিয়েও আত্মহত্যার প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছিল, তবে তার সহপাঠীরা দাবি করেছিলেন যে তিনি একজন সহপাঠীর (প্রাক্তন প্রেমিক) দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এই ঘটনায় একজন ভারতীয় ছাত্রের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
দুই মাসের ব্যবধানে একই হোস্টেলে (kiit) দুই নেপালি ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন।
প্রতিবাদ ও দাবি
নেপালের কাঠমাণ্ডুর পদ্মকন্যা কলেজের ছাত্রীরা প্রিসার মৃত্যুর সঠিক তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। ভারতের অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) ওড়িশা শাখাও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক দীপ্তিময়ী প্রতিহারী বলেন, “বারবার আত্মহত্যার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। প্রিসাকে ন্যায় দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা প্রয়োজন।”
পরিবারের প্রতিক্রিয়া
প্রিসার ভাই গৌরব সাহ জানিয়েছেন, ঘটনার দিন দুপুর ৩টায় প্রিসা বাড়িতে ফোন করে ১৮ মে নেপালে ফেরার জন্য টিকিট কাটতে বলেছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় তারা তার মৃত্যুর খবর পান। বিশ্ববিদ্যালয় রাত ৯টায় ফোন করে তাদের এই দুঃসংবাদ জানায়। প্রিসার পরিবার বর্তমানে কেআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ওড়িশা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান
ওড়িশা রাজ্য সরকার এই ঘটনাকে “দুর্ভাগ্যজনক” আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে প্রিসার পরিবারকে ঘটনার কথা জানিয়েছে। রাজ্য সরকার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে কেআইআইটি প্রশাসন এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
প্রিসা সাহর মৃত্যু কেআইআইটি (kiit) বিশ্ববিদ্যালয়ে নেপালি ছাত্রীদের নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। দুই মাসের ব্যবধানে দুটি অনুরূপ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির দিকে ইঙ্গিত করে। নেপাল সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ, ওড়িশা পুলিশের তদন্ত এবং ছাত্রদের বিক্ষোভ এই ঘটনার সত্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রিসার পরিবার এবং নেপালি সম্প্রদায় এখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।