কুম্ভ মেলা-গোধরার তুলনা টেনে চিন্নাস্বামীকে দুর্ঘটনা আখ্যা খড়গের

৪ জুন বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ঘটে যাওয়া ভিড়ের ঘটনাকে ‘দুর্ঘটনা’ আখ্যা দিয়ে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে (kharge) জানিয়েছেন, যদি এই…

kharge called bengaluru an accedent

৪ জুন বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ঘটে যাওয়া ভিড়ের ঘটনাকে ‘দুর্ঘটনা’ আখ্যা দিয়ে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে (kharge) জানিয়েছেন, যদি এই ঘটনায় কোনো ইচ্ছাকৃত ভুল পাওয়া যায়, তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।

এই দাবির পটভূমিতে খড়গে (kharge) এই মন্তব্য করেছেন । তিনি এই ঘটনার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কুম্ভ মেলায় ঘটে যাওয়া ভিড়ের ঘটনা এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কার পরিস্থিতির তুলনা করে বিজেপির ‘দ্বিমুখী নীতি’র সমালোচনা করেছেন।

   

খড়গের বক্তব্য: দুর্ঘটনা, ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে (kharge)

বুধবার (১১ জুন, ২০২৫) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় খড়গে (kharge) বলেন, “এই ঘটনা নিশ্চিতভাবে ভুল, এবং আমাদের নেতারা ইতিমধ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।” তিনি বিজেপির পদত্যাগের দাবির জবাবে প্রশ্ন তুলে বলেন, “কুম্ভ মেলায় ভিড়ের ঘটনায় কি কেউ পদত্যাগ করেছিল?

আমি বেশি কথা বলি না… কিন্তু লাখ লাখ মানুষ কুম্ভ মেলায় স্নান করেছিলেন, এবং আমার একটি বক্তব্যের জন্য আমাকে সমালোচনা করা হয়েছিল। আমরা অনেক মৃতদেহ ভেসে যেতে দেখেছি।” তিনি আরও বলেন, “শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, কোভিড মহামারীর সময়ও এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন কে পদত্যাগ করেছিল?”

খড়গে (kharge) আরও জানান, যদি এই ঘটনায় কোনো ইচ্ছাকৃত ভুল প্রমাণিত হয়, তবে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এটি একটি দুর্ঘটনা, এটি নিশ্চিতভাবে ভুল, এবং আমাদের নেতারা ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।”

সিদ্দারামাইয়ার প্রতিক্রিয়া: বিজেপির দাবি ‘রাজনৈতিক’

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও এই ঘটনায় বিজেপির পদত্যাগের দাবিকে ‘পুরোপুরি রাজনৈতিক’ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “বিজেপি সবসময় তথ্য বিকৃত করে এবং ভুয়ো তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে(kharge)। তাদের পদত্যাগের দাবির কোনো ভিত্তি নেই।” তিনি কুম্ভ মেলার ভিড়ের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, “কুম্ভ মেলায় ৪০-৫০ জন মারা গিয়েছিলেন, তখন কি তারা পদত্যাগ চেয়েছিল?

একটি ফ্লাইওভার উদ্বোধনের দিন ধসে পড়ে ১৪০ জন মারা গিয়েছিল, তখন কি তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছিল? গোধরা ট্রেন দুর্ঘটনার সময় কে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? চামরাজনগরে অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর ঘটনায় কি তারা বোম্মাইয়ের পদত্যাগ চেয়েছিল?”

সিদ্দারামাইয়া বিজেপির দাবিকে সুবিধাবাদী বলে আখ্যায়িত করে বলেন, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। তিনি এই ঘটনাকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) প্রথম আইপিএল শিরোপা জয়ের উৎসবের সময় ঘটে যাওয়া একটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন।

WTC ফাইনালে রাহানের সর্বকালীন রেকর্ডের দিকে নজর অস্ট্রেলিয়ান তারকার

Advertisements

ঘটনার পটভূমি

৪ জুন বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে আরসিবির আইপিএল জয়ের উৎসবের সময় ভিড়ের কারণে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর বিজেপি কর্ণাটক সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে। বিরোধী দলের নেতারা দাবি করেছেন, এই ঘটনা প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার ফল, এবং সরকারের উচিত এর জন্য দায় স্বীকার করা।

কিন্তু কংগ্রেস নেতারা এই দাবিকে রাজনৈতিক স্বার্থপরতা হিসেবে দেখছেন। খড়গে (kharge) এবং সিদ্দারামাইয়া উভয়েই অতীতের ঘটনার উদাহরণ টেনে বিজেপির দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে অনুরূপ ঘটনায় কোনো পদত্যাগের দাবি ওঠেনি, তাই কর্ণাটকের ক্ষেত্রে এই দাবি অযৌক্তিক।

তদন্ত ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত চলছে, এবং তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন যে, সরকার এই ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। তবে তিনি বিজেপির সমালোচনাকে ‘তথ্যের অপব্যবহার’ এবং ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছেন।

খড়গেও (kharge) তদন্তের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, যদি কোনো ইচ্ছাকৃত ভুল বা অবহেলা প্রমাণিত হয়, তবে সরকার তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে তিনি এই ঘটনাকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি ইচ্ছাকৃত কোনো ষড়যন্ত্র নয়।

রাজনৈতিক প্রভাব

এই ঘটনা কর্ণাটকের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিজেপি এই ঘটনাকে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস এই দাবিকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা হিসেবে চিহ্নিত করে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে। খড়গে এবং সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্যে বিজেপির অতীতের প্রশাসনিক ব্যর্থতার উল্লেখ করে তারা জনগণের মধ্যে বিজেপির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

এই ঘটনা শুধু রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং বড় আকারের জনসমাগমে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বেঙ্গালুরুর ভিড়ের ঘটনা একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, যা ১১ জনের জীবন কেড়ে নিয়েছে। এই ঘটনায় কংগ্রেস নেতৃত্ব ক্ষমা প্রার্থনা করলেও, বিজেপির পদত্যাগের দাবি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। খড়গে (kharge) এবং সিদ্দারামাইয়া এই দাবিকে ‘রাজনৈতিক সুবিধাবাদ’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং অতীতের ঘটনার উদাহরণ টেনে বিজেপির দ্বিমুখী নীতির কথা তুলে ধরেছেন।

তদন্তের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এই ঘটনার দায় নির্ধারণ করা হবে। তবে এই ঘটনা কর্ণাটকের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে সামনে এনেছে।