২ লক্ষ ৮০ হাজার কুকুর সরানো বড় চ্যালেঞ্জ স্বীকার রাজ্য সরকারের

Stray Dog beaten to death

কেরলে পথকুকুর (stray dogs) সমস্যা ক্রমেই প্রশাসনিক জটিলতা থেকে সামাজিক চ্যালেঞ্জে রূপ নিচ্ছে। শুক্রবার কেরলের স্থানীয় স্বশাসন মন্ত্রী এম বি রাজেশ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য থেকে সমস্ত পথকুকুর সরিয়ে ফেলা বাস্তবসম্মত নয়। তিনি বলেন, “পথকুকুর সরানোর নির্দেশ কার্যত অসম্ভব, কারণ কোথাও ABC সেন্টার বানাতে গেলেই স্থানীয় স্তরে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। সেখানে সব কুকুর সরানোর কথা বাস্তবে কীভাবে সম্ভব?”

Advertisements

মন্ত্রীর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সংক্রান্ত কোনও সরকারি নথি এখনও রাজ্যের হাতে পৌঁছায়নি। নির্দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়ার পর সেটি পর্যালোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিক মূল্যায়নে রাজ্য বুঝতে পারছে, এত বিপুল সংখ্যক পথকুকুরকে পুনর্বাসন, শেল্টার হোম তৈরি, চিকিৎসা, ভ্যাকসিনেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত দুরূহ এবং ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া।

   

সর্বশেষ পশুসম্পদ গণনা অনুযায়ী, কেরলে মোট পথকুকুরের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার। অথচ গত এক বছরে বন্ধ্যাকরণ (sterilisation) করা হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ৮২৫টি কুকুর। চলতি আর্থিক বছরে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৩৭। রাজ্যে মোট ১৯টি অ্যানিমাল বার্থ কন্ট্রোল (ABC) সেন্টার থাকলেও এর মধ্যে বেশ কিছু কেন্দ্র পুরোপুরি কার্যকর নয়। বহু জেলায় কেন্দ্র থাকলেও পর্যাপ্ত কর্মী, ডাক্তার এবং পরিকাঠামো না থাকায় কাজে গতি আসছে না।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হল, গোটা রাজ্যে কুকুর ধরা, উদ্ধার এবং স্থানান্তরের কাজের জন্য রয়েছেন মাত্র ৫৯৫ জন অ্যানিমাল ক্যাচার। এই সামান্য সংখ্যক কর্মী দিয়ে ২ লক্ষ ৮০ হাজার কুকুরকে নিয়ন্ত্রণ, ধরা, চিকিৎসা, ভ্যাকসিনেশন এবং রিহ্যাবের কাজ কার্যত সম্ভব নয় বলেই প্রশাসন মনে করছে।

সরকারের মতে, কুকুর সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে বড় অন্তরায় এখন স্থানীয় মানুষের আপত্তি। সাধারণ মানুষ পথকুকুর সমস্যার সমাধান চান, কিন্তু নিজেদের বসত এলাকার কাছে ABC সেন্টার বা ডগ শেল্টার হোম তৈরির প্রস্তাব বেশিরভাগ জায়গাতেই প্রত্যাখ্যান হচ্ছে। এমন অবস্থায় জমি খুঁজে পরিকাঠামো গড়ে তোলা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

Advertisements

সরকার ইতিমধ্যেই কয়েকটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে চলমান বা পোর্টেবল ABC ইউনিট চালু করার পরিকল্পনা, জঙ্গল সংলগ্ন নির্জন এলাকায় ডগ শেল্টার তৈরির সম্ভাবনা, কেন্দ্র-রাজ্য-পশুকল্যাণ বোর্ড যৌথ বৈঠক, প্রতিটি জেলাকে আলাদা ভাবে পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ।

তবে প্রশাসনের আশঙ্কা, যেখানে স্থায়ী কেন্দ্রেই বিরোধিতা রয়েছে, সেখানে পোর্টেবল ইউনিট নিয়েও বাধা তৈরি হতে পারে। এরপরেও সরকার বিষয়টি সক্রিয় গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।

মন্ত্রী এম বি রাজেশ বলেন, “আমরা কুকুর সমস্যার সমাধান চাই, তবে সেই সমাধান বাস্তবভিত্তিক, মানবিক এবং কার্যকর হতে হবে। আদালতের নির্দেশের প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা পালন করতে গেলে পরিকাঠামো, অর্থ, কর্মী ও সামাজিক সহযোগিতা সবার আগে প্রয়োজন।”