সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন লেনিন

কেরালায় বামফ্রন্টের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি পলক্কড় জেলার কুজলমনম এলাকার সিপিএম নেতার (CPM leader) বিজেপিতে যোগদানের ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন। বুধবার সিপিএম এবং…

kerala BJp

short-samachar

কেরালায় বামফ্রন্টের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি পলক্কড় জেলার কুজলমনম এলাকার সিপিএম নেতার (CPM leader) বিজেপিতে যোগদানের ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন। বুধবার সিপিএম এবং এর সহযোগী সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এসএফআই-এর গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতা এম লেনিন সিপিএম ত্যাগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন।

   

লেনিন সিপিএম কুজলমনম শাখার অফিস সম্পাদক, এসএফআই কুজলমনম এরিয়া সেক্রেটারি, পলক্কড় জেলা কমিটির সদস্য, ডিওয়াইএফআই-এর মানজালুর এরিয়া ও ব্লক সেক্রেটারি এবং বামপন্থী সংবাদপত্র দেশাভিমানি-এর রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও তিনি দলে উপেক্ষিত হয়ে থাকার অভিযোগ আনেন।

“দলের মধ্যে উপেক্ষিত হওয়ার অভিমান”
লেনিন জানান, সিপিএম-এর অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং সিনিয়র নেতাদের একচেটিয়া মনোভাবই তাকে দল ছাড়তে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, “এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। দীর্ঘদিন ধরে দলের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও বারবার উপেক্ষার শিকার হতে হয়েছে। এমনকি আমার বাবার মৃত্যুর পর দল লাল পতাকায় তার মরদেহ মুড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানোও প্রয়োজন মনে করেনি। এটি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক ছিল।”

লেনিন আরও জানান, “আমি যে অঞ্চলের মানুষ, সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা সিপিএমের সমর্থক। আমার বাবা এলাকার কমিউনিস্ট আন্দোলনকে মজবুত করার জন্য সারাজীবন কাজ করেছেন। কিন্তু দলের নেতাদের পক্ষ থেকে এমন আচরণ আমাকে হতাশ করেছে।”

বিজেপিতে যোগদানের আনুষ্ঠানিকতা
লেনিন বিজেপির পলক্কড় জেলা কার্যালয়ে বিজেপি রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সি কৃষ্ণকুমারের হাত থেকে সদস্যপদ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি কে এম হরিদাস, জেলা সাধারণ সম্পাদক পি ভেনুগোপালন এবং এ কে ওমানাকুট্টন, আলাথুর মণ্ডলম সাধারণ সম্পাদক কানাকাদাস প্রমুখ।

বিজেপিতে যোগদানের পর লেনিন বলেন, “আমি বিজেপির সঙ্গে নতুন এক অধ্যায় শুরু করছি। দল আমার ওপর যে কোনও দায়িত্ব দেবে, তা আমি সাগ্রহে পালন করব। কোনও শর্ত ছাড়াই আমি দলের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।”

রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
লেনিনের বিজেপিতে যোগদানের ঘটনায় সিপিএম-এর অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনা আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষত, যখন রাজ্যে সিপিএম-এর জেলা সম্মেলন চলছে, তখন একের পর এক নেতার দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদানের ঘটনা শাসক দলের জন্য বড় ধাক্কা।

এ প্রসঙ্গে লেনিন বলেন, “আমার মতো আরও অনেক কর্মী সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন। কারণ, দলে গোষ্ঠীকোন্দল এবং সিনিয়র নেতাদের একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।”

সিপিএম নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া অনুপস্থিত
লেনিনের অভিযোগ এবং দলত্যাগের বিষয়ে সিপিএম-এর জেলা নেতারা কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি। তবে, সূত্রের খবর অনুযায়ী, দলের অভ্যন্তরে এই ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিজেপির নতুন কৌশল?
কেরালার মতো একটি রাজ্যে, যেখানে সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে মূল লড়াই হয়, সেখানে বিজেপি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিজেপি ক্রমাগত কৌশল বদলে কেরালায় নিজেদের উপস্থিতি শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। লেনিনের মতো নেতাদের দলে নিয়ে এসে বিজেপি সিপিএমের ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

লেনিনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
লেনিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, “বিজেপিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত। এখানে আমি নতুন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশের এবং রাজ্যের উন্নয়নের জন্য যা প্রয়োজন, আমি তা করব।”

লেনিনের এই সিদ্ধান্ত কেরালার রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে এবং বিজেপির পক্ষে এটি কতটা লাভজনক হবে, তা সময়ই বলবে। তবে, সিপিএম-এর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং বিজেপির নতুন কৌশল স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, রাজ্যে রাজনীতির গতিপ্রকৃতিতে বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে।