মুসলিমদের দ্বিতীয় বিয়ে ‘প্রতিরোধে’ কেরালা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়

Kerala HC Muslim Second Marriage Consent

ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় মহিলাদের অধিকার রক্ষার আরেক জয়ের খবর এসেছে কেরালা হাইকোর্ট থেকে। আদালতের এক ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছে, একজন মুসলিম পুরুষ তার দ্বিতীয় বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে পারবে না যদি না তার প্রথম স্ত্রীকে জানানো হয় এবং তার মতামত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তটি কেরালা রেজিস্ট্রেশন অফ ম্যারেজেস (কমন) রুলস, ২০০৮-এর অধীনে নেওয়া হয়েছে, যা সাংবিধানিক অধিকারকে ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইনের উপর প্রাধান্য দিয়ে মহিলাদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করেছে। জাস্টিস পি.ভি. কুণ্ণিকৃষ্ণনের এই রায় ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছে। এটি শুধু একটা আইনি সিদ্ধান্ত নয়, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য একটা বড় অনুপ্রেরণা, যারা লম্বা সময় ধরে পুরুষতান্ত্রিক রীতির শিকার হয়ে আসছেন।

Advertisements

রায়ের পটভূমি একটা সাধারণ কিন্তু হৃদয়বিদারক ঘটনা থেকে শুরু। কান্নুরের এক ৪৪ বছরের মুসলিম পুরুষ এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী (কাসরগোড়ের ৩৮ বছরের মহিলা) হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন যাতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় তাদের ২০১৭ সালের বিবাহ রেজিস্ট্রি করার। পুরুষটি বলেছিলেন যে তার প্রথম বিবাহের দুটি সন্তান আছে এবং দ্বিতীয় বিবাহও প্রথম স্ত্রীর সম্মতিতে হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার এই বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে অস্বীকার করেছিলেন। আদালত জানতে পারেন যে প্রথম স্ত্রীকে এই আবেদনে কোনো পক্ষ হিসেবে যুক্ত করা হয়নি, এবং তাকে শোনা হয়নি। জাস্টিস কুণ্ণিকৃষ্ণন বলেছেন, “এই আদালত তার স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ রেজিস্ট্রির সময় প্রথম স্ত্রীর অনুভূতিকে উপেক্ষা করতে পারে না।” তিনি যোগ করেছেন যে ৯৯.৯৯ শতাংশ মুসলিম মহিলা তাদের স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের বিরোধিতা করবেন যদি প্রথম সম্পর্ক এখনও চলমান থাকে।

   

এই রায়ের মূলে রয়েছে সাংবিধানিক অধিকারের প্রাধান্য। আদালত স্পষ্ট করেছে যে ধর্মীয় আইন যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, সেগুলো সংবিধানের সমানতা এবং ন্যায়বিচারের নীতির অধীন। মুসলিম পার্সোনাল ল’ অনুসারে পুরুষের চারটি বিবাহের অনুমতি আছে, কিন্তু এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শর্তে যেমন সকল স্ত্রীদের প্রতি সমান ন্যায় করতে পারলে। কিন্তু কুরআনের চেতনা মোনোগ্যামিকে উৎসাহিত করে, এবং পলিগ্যামি একটা ব্যতিক্রম মাত্র। আদালত বলেছে, “কুরআন বা মুসলিম আইন প্রথম স্ত্রীর জ্ঞান বা সম্মতি ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ বা অবৈধ সম্পর্ককে অনুমোদন করে না।” রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, দ্বিতীয় বিবাহের আবেদন পেলে প্রথম স্ত্রীকে নোটিশ দিতে হবে। যদি সে বিরোধিতা করে এবং বলে যে বিবাহটি অবৈধ, তাহলে রেজিস্ট্রি না করে বিষয়টি সিভিল কোর্টে পাঠাতে হবে যাতে বিবাহের বৈধতা নির্ধারিত হয়।

Advertisements

এই রায়টি কেরালার মতো অগ্রগামী রাজ্যে মহিলা অধিকারের জন্য একটা মাইলফলক। এটি শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য একটা উদাহরণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ভাইরাল হয়েছে, যেখানে #KeralaHighCourt এবং #WomenRights ট্যাগ ট্রেন্ড করছে। একজন ইউজার লিখেছেন, “এটা মহিলাদের কণ্ঠস্বরের জয়! ধর্মের নামে অধিকার খর্ব করা যাবে না।” অন্যরা বলছেন, “কেরালা আবারও দেশকে পথ দেখাচ্ছে।” কিন্তু কিছু সমালোচক বলছেন যে এটি ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করছে। তবে আদালত স্পষ্ট করেছে যে ধর্ম দ্বিতীয়, অধিকার প্রথম।

এই রায়ের ফলে কেরালায় হাজার হাজার মহিলা উপকৃত হবেন, যারা বিবাহ রেজিস্ট্রির সময় তাদের মতামত দিতে পারবেন। এটি পার্সোনাল ল’-এর সংস্কারের দাবিকে আরও জোরালো করবে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যও এই রায় থেকে শিক্ষা নিতে পারে। সার্বিকভাবে, এটা ন্যায়বিচারের একটা জয়, যা মহিলাদের ক্ষমতায়ন করে। ভারত মাতা কি জয় হো—এই জয় সমানতার পথে নতুন আলো জ্বালাবে!