Kerala election: বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরায় ঢুকে মুখ পুড়িয়েছে টিম মমতা। বাংলার শাসক দলের পক্ষে উত্তর পূর্বের ত্রিপুরায় জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার মধুর ভোট অভিজ্ঞতা হয়ে যাওয়ার পর আর ও মুখো হননি মমতা-অভিষেক কেউ। ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনে লড়ার বিষয়ে সিপিআইএমের কটাক্ষ ছিল, বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ করতে সংঘের ছকবাজিতে মমতার সবুজ সংকেত ছিল। রাজ্যটি বিজেপি পরপর দুবার ধরে রেখেছে। ত্রিপুরায় সিপিআইএম প্রধান বিরোধী দল। এবার বাম ঘাঁটি কেরলে তৃণমূল যাচ্ছে ভোট লড়তে!
তৃণমূল সূত্রে খবর, কেরলের বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রার্থী দেবে দল। এ রাজ্যের নীলাম্বুর আসনটি বেছে নিয়েছেন মমতা। এই আসনে বাম জোটের দু’বারের বিধায়ক ছিলেন পিভি আনওয়ার। এখন তিনি তৃণমূলে আছেন ৷ তিনি পদত্যাগ করান বিধানসভা আসনটি খালি হয়। সে কারণে হবে উপনির্বাচন। তাকেই প্রার্থী করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্নেষণে বলা হচ্ছে, কেরলে তৃণমূলের করুণ হাল হবে। এটা ভালোই জানেন মমতা। তার লক্ষ্য জাতীয় দলের তকমা পুনরুদ্ধার। পশ্চিমবঙ্গের পরপর তিনবার সরকার গড়লেও তৃণমূলের সর্বভারতীয় তকমা কেটে গেছে। রাজ্যে রাজ্যে ন্যূনতম ৬ শতাংশ ভোট পেলে জাতীয় দল হওয়া যাবে। সেই লক্ষ্যেই দক্ষিণে ছুটছেন মমতা।
কেরলে পরপর দুবার সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ সরকার চলছে। তারা তৃতীয় দফায় এ রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া। বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেস। কেরলের রাজনৈতিক জমিতে বাম-কংগ্রেস শত্রু আবার এ রাজ্যে সংঘের শাখাগুলো শক্তিশালী। আরএসএস ও কমিউনিস্ট সংঘর্ষে দুপক্ষের লাস পড়ে কেরলে। ত্রিপুরার বাম ঘাঁটি ভাঙলেও কেরল দখল এখনই সম্ভব নয় বলে আরএসএস সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে সংঘের রাজনৈতিক শাখা বিজেপির লক্ষ্য কেরলে জমি শক্তিশালী করা।
কেরলে মূল লড়াই হতে চলেছে সিপিআইএম ও কংগ্রেসের মধ্যে। এ রাজ্যেটি এখন দেশে একমাত্র বাম শাসিত। কেরল দখলের জন্য মরিয়া কংগ্রেস। প্রভূত উন্নয়নের বিশ্বজনীন স্বীকৃতির নথি দিয়ে সিপিআইএমের তরফে প্রচারে ঝড় তোলা হয়েছে। কেরলে বিজেপির ফলাফল কী হবে তা নিয়েও চলছে চর্চা।
সিপিআইএমসহ বিভিন্ন বাম দলগুলোর কটাক্ষ,তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরএসএসের বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তাই তিনি এবার ত্রিপুরার মতো কেরলমুখী। তিনি মুখেই বিজেপি বিরোধী। সম্প্রতি আরঅসএস প্রচারক ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় সামাজিক মাধ্যমে তৃণমূল ও বিজেপির সেটিং বিতর্ক তুলেছেন। উল্লেখ্য ত্রিপুরায় বাম জমানা শেষ হওয়ার বছরে তথাগতবাবু ছিলেন সেই রাজ্যের রাজ্যপাল।
পশ্চিমবঙ্গে টানা সাড়ে তিন দশকের বাম জমানা শেষ হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। তখন বিজেপি ও মমতার জোট। সেই জোটের হয়ে তথাগত রায় ছিলেন মমতার বিশেষ ঘনিষ্ঠ। আরএসএসের নজরে মমতা ‘দেবী দুর্গা’ হিসেবে চিহ্নিত হন। বাংলায় মমতার আমলেই সংঘের সর্বাধিক শাখা তৈরি হয়। পরে বিজেপির সঙ্গে মমতার জোট ভাঙলেও এ রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে যায় তারা। কেরলে এলডিএফ সরকারের বর্তমান উন্নয়ন খতিয়ান ২০২৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয়েছে
পরিকাঠামো ও শিল্প উন্নয়ন
জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পে গতি আনার জন্য রাজ্য সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপের ফলে কাঠামোগত ত্রুটি সত্ত্বেও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত রাজ্যে ৩.৫৩ লাখ নতুন উদ্যোগ গড়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে ৭.৪৯ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং ₹২২,৬৮৮ কোটি বিনিয়োগ এসেছে।রাজ্য সরকার ১,০৭০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ₹১৩,০১৩ কোটি মূল্যের উন্নয়ন কাজ ১০০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে।
সামাজিক কল্যাণ ও দারিদ্র্য নির্মূল
বাম জোটের রাজ্য সরকারের LIFE প্রকল্পের অধীনে ৪.৫ লাখ গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে এবং ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রতি মাসে ₹১,৬০০ করে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পাচ্ছেন। ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত রাজ্যের রাজস্ব আয় ৭১% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সরকারের সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নকে প্রতিফলিত করে।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন
রাজ্য সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন ও রোবোটিক্সের মতো শিল্প ৪.০ প্রযুক্তি সমর্থনে Space Park, Science Park, Fab Lab, Digital University ও Blockchain Academy প্রতিষ্ঠা করেছে। K-FON প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩,০০০ সরকারি অফিসকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে, যা ডিজিটাল সংযোগের ক্ষেত্রে রাজ্যের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে ।
সমালোচনা ও বিরোধী প্রতিক্রিয়া
রাজ্যের বিরোধী নেতা V.D. Satheesan বাম জোট পরিচালিত রাজ্য সরকারের উন্নয়ন প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেন, মহাসড়ক নির্মাণে গুণগত মানের অভাব এবং SilverLine রেল প্রকল্পের জন্য বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন না থাকা সরকারের অগ্রগতির প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করে।