সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে ‘ফাঁদ’, তিন মাসেও কাশ্মীর ছাড়তে পারেনি পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিরা

কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসদমন অভিযানে বড় সাফল্য ভারতীয় সেনার। শ্রীনগরের উপকণ্ঠে ‘অপারেশন মহাদেব’ অভিযানে নিহত হল তিন পাকিস্তানি জঙ্গি, যারা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের…

Kashmir counter-terrorism success

কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসদমন অভিযানে বড় সাফল্য ভারতীয় সেনার। শ্রীনগরের উপকণ্ঠে ‘অপারেশন মহাদেব’ অভিযানে নিহত হল তিন পাকিস্তানি জঙ্গি, যারা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপরে হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার সংসদে জানান, ফরেন্সিক ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে কেন্দ্র নিশ্চিত হয়েছে, নিহত তিনজনই ওই জঘন্য সন্ত্রাসবাদী ঘটনার মূলচক্রী (Kashmir counter-terrorism success)।

তিন মাসের অপারেশন, সুড়ঙ্গে জাল, পলায়নের পথ রুদ্ধ

পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিলের হামলার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল তিন জঙ্গি, সুলেমান, আফগানি ও জিব্রান। তারা পাকিস্তানের নাগরিক এবং লস্কর-ই-তইবার সদস্য বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এতদিন ধরে তারা কাশ্মীরেই থেকে গিয়েছিল কেন?

   

সরকারি সূত্র বলছে, সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে কাশ্মীরে একটি বিশদ ফাঁদ পেতে রেখেছিল। পাকিস্তানে পালানোর সম্ভাব্য ৮ কিমি দীর্ঘ রুট আগেভাগেই চিহ্নিত করে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পাশাপাশি, সীমান্ত লাগোয়া একাধিক গোপন সুড়ঙ্গ কৌশলে জলমগ্ন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বেরনোর সমস্ত রাস্তা কার্যত রুদ্ধ হয়ে পড়ে জঙ্গিদের জন্য।

গোয়েন্দা নজরদারি ও ‘লাইভ’ ট্র্যাকিংয়ে অপারেশন সফল

তিন মাস ধরে টানা চলেছে গোয়েন্দা নজরদারি। কথোপকথনে আড়ি পাতা, ড্রোন নজরদারি এবং স্থানীয় ইনফর্মারদের সহযোগিতায় অবশেষে নিশ্চিত হয় বাহিনী, জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে শ্রীনগরের নিকটবর্তী এক এলাকায়। সোমবার, যখন সংসদে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বক্তব্য রাখছিলেন, সেই সময়েই শুরু হয় ‘অপারেশন মহাদেব’। সেনা, সিআরপিএফ ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের যৌথ অভিযানে প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে চলে গুলির লড়াই। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় তিন জঙ্গি। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে এম৯, একাধিক একে-৪৭ রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড।

Advertisements

স্থানীয় ‘সহযোগী’দের সামনে দেহ শনাক্ত, ১০০% নিশ্চিত চেয়েছিলেন শাহ

জঙ্গিদের যে অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল, সেই অস্ত্র চণ্ডীগড়ের ফরেন্সিক ল্যাবে বিশেষ বিমানে পাঠানো হয়। গুলির খোল মিলিয়ে দেখা হয় পহেলগাঁও হামলার নমুনার সঙ্গে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন, দু’টোর মধ্যে ৯৯ শতাংশ মিল রয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ, সূত্র বলছে, গোটা রাতে জেগে ছিলেন—বিজ্ঞানী ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে নিশ্চিত হন সমস্ত প্রমাণে। এরপরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়—পহেলগাঁও হামলার তিন মূল অভিযুক্ত জঙ্গির মৃত্যুর বিষয়টি।

রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট: জবাব দেবে ভারত, পালানোর রাস্তা বন্ধ

এই অভিযান শুধু সন্ত্রাস দমন নয়, প্রতীকীভাবেও কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া বার্তা। কাশ্মীরে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথ এবার আর খোলা থাকবে না। সীমান্ত ঘেঁষা সুড়ঙ্গ পর্যন্ত রুদ্ধ করে প্রমাণ দিল বাহিনী, ভারতের নতুন কৌশল শুধু আক্রমণ নয়, প্রতিরোধের গূঢ়তা ও ধৈর্যেরও নিদর্শন।