মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মৃত্যু, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল

কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার জেলার চাসোটি গ্রামে ভয়াবহ মেঘভাঙা বৃষ্টিতে (Kashmir Cloudburst Disaster) পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪০ জনের,…

মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মৃত্যু, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল

কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার জেলার চাসোটি গ্রামে ভয়াবহ মেঘভাঙা বৃষ্টিতে (Kashmir Cloudburst Disaster) পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪০ জনের, এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মুহূর্তের মধ্যেই পুরো এলাকা বিপর্যস্ত করে দেয়।

চাসোটি গ্রাম থেকে প্রতিবছর শুরু হয় বিখ্যাত মাছাইল মাতা যাত্রা। কিন্তু এবছর সেই যাত্রা মাঝপথেই থেমে গেল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। স্থানীয় প্রশাসন ও আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, ভক্তদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবছরের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে তীব্র ধস ও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ফলে যাত্রাপথ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

   

দুর্যোগের খবর পৌঁছতেই কেন্দ্র ও রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “শোকাহত পরিবারগুলির জন্য আমার সমবেদনা জানাই। উদ্ধারকাজ যেন সফলভাবে সম্পন্ন হয়, এই প্রার্থনা করি।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একই প্ল্যাটফর্মে শোক প্রকাশ করে জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, “গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে এবং সবরকম সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।”

কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। তবে সরকারি ভাষণ এবং কুচকাওয়াজ যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জননিরাপত্তা এবং শোকপ্রকাশের জন্য।

এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কর্তব্যরত দুই সিআইএসএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। উদ্ধারকাজে ব্যস্ত জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), সেনা এবং স্থানীয় পুলিশ। ইতিমধ্যেই অন্তত ১২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Advertisements

কিশ্তওয়ার পুলিশ নিখোঁজদের পরিবারের জন্য একটি হেল্পলাইন চালু করেছে, যাতে তারা প্রিয়জনদের খোঁজখবর নিতে পারেন। কংগ্রেসও কেন্দ্রীয় সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে আরও বেশি সংখ্যক উদ্ধারকারী দল পাঠানোর জন্য, যাতে দ্রুত নিখোঁজদের খুঁজে বের করা যায় এবং বিপর্যস্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়।

চাসোটির স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এমন ভয়াবহ মেঘভাঙা বৃষ্টি তারা আগে কখনও দেখেননি। হঠাৎ করেই আকাশ কালো হয়ে আসে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই প্রবল বর্ষণ শুরু হয়, যার ফলে পাহাড়ি নদীগুলি ফুলে ওঠে ও প্রবল স্রোতে গ্রামাঞ্চল ভেসে যায়। ঘরবাড়ি, দোকান, গবাদি পশু—সবকিছু মুহূর্তের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ি অঞ্চলে মেঘভাঙা বৃষ্টির প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সঠিক সতর্কতা ব্যবস্থা এবং আগাম প্রস্তুতি নিলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমানো সম্ভব হতে পারে।

বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে এবং দুর্গত এলাকাগুলিতে ত্রাণ পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে সতর্ক থাকার ও অযথা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।