প্রেমের টান মানুষকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে, তা আবারও প্রমাণিত হল ত্রিপুরা সীমান্তে ঘটে যাওয়া এক নাটকীয় ঘটনায়। এক কর্ণাটকের যুবককে গ্রেফতার (Karnataka Man Arrested০ করা হয়েছে ত্রিপুরার সেপাহিজলা জেলা থেকে, বাংলাদেশের এক মহিলাকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করাতে সাহায্য করার অভিযোগে। চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, ওই যুবক ও মহিলা ছিলেন প্রেমের সম্পর্কে জড়িত। এই ঘটনায় সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, পাশাপাশি শুরু হয়েছে মানব পাচার সন্দেহে তদন্ত।
কী ঘটেছিল?
ত্রিপুরা পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, কর্ণাটকের বিদার জেলার বাসিন্দা দত্তা যাদব (Datta Yadav) একজন কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেন। কয়েক বছর আগে তিনি বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় বাংলাদেশি তরুণীটির, যিনি ওই সময় মুম্বইয়ের একটি বিউটি পার্লারে এবং পরে বেঙ্গালুরুতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তাদের আলাপ ক্রমে ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয় এবং দুজনেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
তবে পরে কোনও এক সময়ে ওই তরুণী বাংলাদেশে ফিরে যান। তবে প্রেমে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি দত্তা যাদব। তিনি স্থির করেন, যেকোনোভাবে তাঁর প্রেমিকাকে আবার ভারতে নিয়ে আসবেন।
কাগজপত্র ছাড়াই সীমান্ত পেরনো!
জানা গেছে, ৩৫ বছর বয়সি ওই নারী বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাসিন্দা। বুধবার তিনি পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই অবৈধভাবে ত্রিপুরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। অভিযোগ, এই অনুপ্রবেশে তাঁকে সাহায্য করেন দত্তা যাদব নিজেই।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (BSF) তৎপর হয়ে ওঠে এবং বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার সেপাহিজলা জেলা থেকে ওই যুগলকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁদের ত্রিপুরা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, তারা আগরতলা থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল।
আইনি পদক্ষেপ ও তদন্ত
শুক্রবার অভিযুক্ত যুগলকে আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় পাসপোর্ট আইন, ফরেনার্স অ্যাক্ট এবং নতুন ভারতীয় দণ্ডবিধি তথা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
ত্রিপুরা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, “এই ঘটনায় কোন ভারতীয় এজেন্টরা এই অনুপ্রবেশে সহায়তা করেছে, আমরা সেই দিকটিও খতিয়ে দেখছি। এটি শুধুমাত্র প্রেমের টানে সংঘটিত ব্যক্তিগত ঘটনা নাকি এর পিছনে কোনও বড় মানব পাচার চক্র সক্রিয় আছে, তা খুঁজে বের করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আমরা তাঁদের পুলিশি হেফাজত চাইতেও পারি।”
সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনার পর সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে এমন অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা নতুন নয়, তবে প্রেমের টানে এভাবে এক তরুণীকে ভারতে আনার ঘটনা বিরল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে মানবিক আবেগের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখা জরুরি।
এই ঘটনা একটি গভীর বার্তা বহন করে — ব্যক্তিগত সম্পর্ক, প্রেম কিংবা আবেগ কখনও কখনও সীমান্তের দেওয়ালও ডিঙোতে পারে। কিন্তু আইন তো আর আবেগ দেখে না। এখন দেখার, এই ঘটনা নিছক প্রেমের টানেই ঘটেছে, নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে আরও বড় কোনও অপরাধচক্রের হাতছানি। তদন্ত চলছে। পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপ ও তদন্তের অগ্রগতির দিকেই এখন নজর প্রশাসনের।