ভাঁড়ার ভরাতে বাস ভাড়া বাড়াচ্ছে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার

Hike in Bus Fares: কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার নতুন বছরের প্রথমেই জনগণের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ চাপিয়ে দিল। জানুয়ারি ৫ থেকে রাজ্যের চারটি পরিবহন সংস্থা বাস…

Karnataka bus

Hike in Bus Fares: কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার নতুন বছরের প্রথমেই জনগণের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ চাপিয়ে দিল। জানুয়ারি ৫ থেকে রাজ্যের চারটি পরিবহন সংস্থা বাস ভাড়ায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি আনছে। এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, আর BJP একে বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে মরিয়া।

বাস ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা

   

সিদ্দারামাইয়া মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কর্ণাটক রাজ্যের সমস্ত বাস পরিষেবা—কেএসআরটিসি (KSRTC), বিএমটিসি (BMTC), এনইকেআরটিসি (NEKRTC), এবং এনডব্লিউকেআরটিসি (NWKRTC)—তে ১৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর হবে। পরিবহন দপ্তরের দাবি, জ্বালানি খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এই বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

পরিবহন দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “বিগত কয়েক বছরে খরচ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তেলের দাম থেকে শুরু করে কর্মীদের বেতন—সবই চাপ সৃষ্টি করছে। এই ভাড়া বৃদ্ধি ভাঁড়ারের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে।”

BJP-এর আক্রমণ

BJP সরকারকে তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, কংগ্রেস তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ। বিশেষ করে ‘শক্তি স্কিম’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে BJP নেতা বলেছেন, “যেখানে কংগ্রেস সরকার মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস যাত্রার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখানে এখন পুরুষদের জন্য ভাড়া দ্বিগুণ করা হচ্ছে।”

BJP মুখপাত্র বলেন, “এটা ‘ফ্রি ফর ওয়াইফ, ডাবল ফর হাজব্যান্ড’-এর এক স্পষ্ট উদাহরণ। কংগ্রেস সরকার জনগণের থেকে আরও টাকা আদায়ের নতুন উপায় বের করছে। তারা শাসন নয়, কর সংগ্রহে ব্যস্ত।”

‘শক্তি স্কিম’ নিয়ে বিতর্ক

কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘শক্তি স্কিম’-এর মাধ্যমে মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও মহিলারা এই সুবিধা পাচ্ছেন, তবে এর আর্থিক চাপ পরিবহন সংস্থাগুলির উপর পড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই স্কিম কার্যকর করতে গিয়ে সরকার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

BJP এই বিষয়ে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছে, “যদি শক্তি স্কিম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল না থাকে, তবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত হয়নি। এখন জনগণের উপর এই বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

বাস ভাড়া বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে প্রতিদিনের যাতায়াতকারী কর্মজীবী ও ছাত্ররা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত তাদের বাজেটকে বড় আঘাত করবে।

একজন অফিসযাত্রী বলেন, “আমরা প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করি। এই ভাড়া বৃদ্ধি আমাদের পকেটের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।”

অন্যদিকে, মহিলা যাত্রীরা যারা শক্তি স্কিমের সুবিধা পাচ্ছেন, তারা বলছেন, “আমাদের জন্য বিনামূল্যে হলেও, পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।”

কংগ্রেসের সাফাই

কংগ্রেস সরকার এই ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে, “পরিবহন সংস্থাগুলি লোকসানের মুখোমুখি। শক্তি স্কিম চালু করার পর থেকে রাজ্য সরকারের উপর বাড়তি চাপ পড়েছে। এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র পরিষেবার মান বজায় রাখার জন্য নেওয়া হয়েছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেস সরকারের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ও আর্থিক উভয় ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জের কারণ হতে পারে। একদিকে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হবে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আস্থা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

ভবিষ্যতের প্রভাব

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাস ভাড়া বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত কর্ণাটকের স্থানীয় নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। BJP ইতিমধ্যেই এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

কর্ণাটক সরকারের বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। একদিকে সরকার বলছে, এই পদক্ষেপ পরিবহন পরিষেবা টিকিয়ে রাখতে জরুরি, অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, এটি জনগণের পকেটে আঘাত করার সমান। এখন দেখার বিষয়, এই বিতর্ক রাজনৈতিক সমীকরণে কী পরিবর্তন আনে।