কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার একটি বিতর্কিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া নেতৃত্বাধীন এই সরকার ইউটিউব চ্যানেলগুলোর (YouTube Channel ) জন্য টিভি চ্যানেলদের মতো লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে, বিশেষ করে যে চ্যানেলগুলো নিজেদেরকে সংবাদ মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভুল তথ্য, কলঙ্কজনক বিষয়বস্তু এবং ব্ল্যাকমেইলের মতো অনৈতিক কার্যক্রম প্রতিরোধ করা। তবে এই প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে তীব্র আপত্তি ও প্রশ্ন উঠেছে, যা স্বাধীন প্রকাশের স্বাধীনতা ও সরকারী নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে।
এই উদ্যোগটি গতকাল, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ কর্ণাটক ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (ইএমজেএ) কর্তৃক একটি মেমোরেন্ডামের পরে এসেছে। ইএমজেএ-এর দাবি, টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য যেমন লাইসেন্স প্রয়োজন, তেমনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রচারকারী ইউটিউব চ্যানেলগুলোর জন্যও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তাদের অভিযোগ, অনলাইন মাধ্যমে অপরিশোধিত তথ্য ও ভুল তথ্য প্রচারের কারণে জনগণের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা বাড়ছে। একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে ধর্মস্থলের সর্বশেষ “গোপন কবরস্থান” বিতর্ক, যেখানে ইউটিউব চ্যানেলগুলো অপরিশোধিত তথ্য প্রচার করে বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন যে, স্বাধীন প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করা হচ্ছে, তবে ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যমের জন্য কিছু দায়িত্ববোধও জরুরি।
সরকার এখনো নির্দিষ্ট নিয়মাবলি ঘোষণা করেনি। তবে প্রস্তাবিত নীতিতে ইউটিউব সংবাদ চ্যানেলগুলোর জন্য একটি লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করা হতে পারে, যার মাধ্যমে চ্যানেলগুলোকে নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। এর ফলে ভুল তথ্য প্রচার বা কোনো ব্যক্তির প্রতিষ্ঠাকে ক্ষতি করার দায়িত্ব নেওয়া যাবে। পরের মাসে স্রষ্টা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। তবে এই ব্যবস্থা কীভাবে কার্যকর করা হবে, বাইরের রাজ্য থেকে অপারেট করা চ্যানেলগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে, এমন প্রশ্ন উঠেছে।
এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করার একটি চেষ্টা। বিশেষ করে, যে চ্যানেলগুলো কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা করে, তাদের লাইসেন্স প্রদানে বাধা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। একজন ব্যবহারকারী টুইট করেছেন, “এটি স্বাধীনতাকে বন্ধ করার একটি গলুই, নয়তো সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ করা।” অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন, যারা মনে করেন যে ভুল তথ্যের প্রভাব কমাতে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। তবে ছোট চ্যানেল বা স্বাধীন স্রষ্টাদের জন্য এই নিয়মগুলো অর্থনৈতিকভাবে কঠিন হতে পারে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে।
এই প্রস্তাবের ফলাফল কী হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া এই নিয়ম কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদি এটি বাস্তবায়ন করা যায়, তবে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রচারের ধরন ও গুণমানে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে, স্বাধীনতা ও দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হবে। জনমত এবং বিতর্ক এখনো চলমান, এবং ভারতের ডিজিটাল মাধ্যমের ভবিষ্যৎ এই সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।